'আতাউর রহমান সিকদার' -এর ব্লগ
“নির্দেশ হইল: হে যমিন! তোমার সব পানি গিলিয়া ফেল, আর হে আকাশ থামিয়া যাও। অত:পর পানি যমিনে বসিয়া গেল, ফয়সালা চুড়ান্ত হইয়া গেল। কিশতী জুদী পবতগাত্রে আসিয়া ভিড়িল.......” (সুরা হুদ, আয়াত ৪৪)
|
|||
আলী ইবনু আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন: জীবনের অন্তিত মুহুর্তে যে কথাগুলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল তা হচ্ছে: “নামাজ, নামাজ এবং তোমাদের অধীনস্তরা”। টীকা: ১)‘তোমাদের অধীনস্তরা’ বলে সতর্কবানী উচ্চারণ করার কারন এই যে, কিয়ামাতের দিন কোন কোন মু’মিন বান্দা ভুরি ভুরি নেক কাজ নিয়ে হাজির হবে কিন্তু সেই সাথে তার আমলনামায় থাকবে অধীনস্তদের হক নষ্ট করার খতিয়ান। তখন এসকল মুমিনদের নেক আমল ঐসব মাযলুমদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। ফলশ্রুতিতে, আমলনামায় ভুরি ভুরি নেক কাজ থাকা সত্বেও অনেকে জাহান্নামী হবে। ২)এ যুগে ‘অধীনস্তরা’ বলতে বোঝানো হবে: ঘরের চাকর চাকরানী, হোটেলের বয়- বাবুর্চী থেকে শুরু এমন প্রতিটি শ্রমিক, কর্মচারী ও অধীন ব্যক্তি যারা তাদের নিয়োগকর্তা বা মালিকের কৃপাদৃষ্টির মুখাপেক্ষী। অনুরুপভাবে এ সতর্কবানীর আওতায় আসবে রাষ্ট্রীয় সংস্থার এমন প্রতিটি কর্তা ও দায়ীত্বশীল ব্যক্তি যাদের কর্তৃত্বে ও যিম্মাদারীতে রয়েছে রাষ্ট্রের প্রজাসাধারনের হক বা অধিকারের বিষয়াবলী।
|
|||
কুরআন কারিম থেকে.. “কিয়ামাতের দিন আসমান গলিত রুপার মতো বর্ণ ধারন করবে (অর্থাৎ বার বার রঙ পরিবর্তিত হবে) (৮) পাহাড়সমুহ রং বেরং এর ধুনিত পশমের মত হয়ে যাবে (৯) কোন পরম বন্ধুও বন্ধুকে জিজ্ঞেস করবেনা (১০) অথচ তারা একজন আরেকজনকে ঠিকই দেখতে পাবে, অপরাধী ব্যক্তি সেদিন আযাব থেকে নিজেকে বাচাবার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে তার সন্তান সন্ততিকে (১১) স্ত্রীকে ও ভাইকে (১২) এবং তাকে আশ্রয়দানকারী জ্ঞাতি-গোষ্টীর সকল আপনজনকে (১৩)এমনকি পৃথিবীর সবকিছুই দিতে চাইবে (১৪) (সুরা আল মা’আরিজ)
|
|||
যে কারনে সৌদী আরবের সাথে মিল রেখে রোজা/ইদ পালন অসম্ভব 21 April 2019 অধুনা বাংলাদেশের কতক লোক সৌদী আরবের সাথে মিল রেখে একই দিনে রোজা, ইদ ইত্যাদি উদযাপন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এটি কিভাবে সম্ভব? সৌদী আরবের সাথে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য, বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্রামাঞ্চলে খবর প্রদানের জটিলতা – এ বিষয়গুলোকে সামনে রাখলে এব্যবস্থা আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য মনে হয় কি? আমি সৌদী আরবে ছিলাম ৩১ বছর। দীর্ঘ এ সময়ে, কোন কোন বছর এমন হয়েছে যে, রোজার ইদের চাদ দেখার খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে মাগরিবের এক থেকে দেড় ঘন্টা পর। মনে করুন: আকাশ মেঘলা থাকার কারনে সৌদী আরবে চাদ দেখার খবর প্রকাশিত হলো রাত ৮টায়। এর মানে হচ্ছে বাংলাদেশে এ সংবাদ পৌছাবে রাত ১১টায়। ঢাকা শহরে না হয় আপনি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে এখবর পৌছে দিলেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে? ধরুন, আপনি তাদের নিকট অবশ্যই খবরটা ঐ রাতে পৌছাবেন। আপনাকে রাত ১টা ২টা অবধি শত শত ফোন করতে হবে, বাড়ী বাড়ী যেতে হবে। তাই নয় কি?
|
|||
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তিন প্রকার বিচারক রয়েছে। এর মধ্যে এক প্রকার জান্নাতে এবং দু’প্রকার জাহান্নামে যাবে। যে বিচারক সত্যকে জানতে পেরেছে এবং সে অনুসারে বিচার ফয়সালা করেছে, সে জান্নাতে যাবে। যে বিচারক সত্যকে উপলব্ধি করেও স্বার্থ বা ক্রোধবশত অবিচার করেছে সে জাহান্নামে যাবে। আর যে বিচারক অজ্ঞতা সত্বেও বিচার ফয়সালা করেছে সে-ও জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসুল, সে-তো অজ্ঞতাবশত রায় দিয়েছে, সে কেন জাহান্নামে যাবে? রাসুল সা: বললেন: তার অপরাধ হলো: সে না জেনে কেন রায় দিতে গেল” (বর্ণনাকারী: বুরাইদা রা:, মুসতাদরাক হাকিম) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: “দুনিয়াতে দশজনেরও নেতা বা দায়িত্বশীল ছিল এমন ব্যক্তিকে কিয়ামাতের দিন এরুপ অবস্থায় উত্থিত করা হবে যে, তার দু’হাত তার গলার সাথে বাধা থাকবে। অত:পর, হয় তার ন্যায়বিচার তাকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রেরণ করবে অথবা তার অবিচার তাকে এ অবস্থায়ই জাহান্নামে নিয়ে যাবে”। (মুসনাদ আহমাদ, ইবন হিব্বান)
|
|||
কুরআন কারিম থেকে.. “আল্লাহর কাছে তাওবা কবুল হবার অধিকার একমাত্র তারাই লাভ করে যারা অজ্ঞতার কারনে কোনো খারাপ কাজ করে বসে এবং তারপর অতি দ্রুত তাওবা করে। এধরণের লোকদের প্রতি আল্লাহ আবার তার অনুগ্রহের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং আল্লাহ সমস্ত বিষয়ের খবর রাখেন, তিনি জ্ঞানী ও সবজ্ঞ। কিন্তু তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা পাপ করে যেতেই থাকে, এমনকি মৃত্যুর সময় এসে গেলে বলে, আমি এখন তাওবা করলাম। অনুরুপভাবে তাওবা তাদের জন্যও নয়, যারা মৃত্যুর সময় পযন্ত কাফির থাকে..... (সুরা আন নিসা, আয়াত ১৭-১৮)
|
|||
বিভিন্ন অকাট্য দলিল এবং যুক্তি একথা প্রমাণ করে যে, কিয়ামাতের নিকটবর্তী সময়ে ঈসা ইবনু মারিয়াম (আলাইহিমাস সালাম) পুনরায় এ পৃথিবীতে আগমন করবেন। নতুন কোন শারিয়াত নিয়ে নয়, বরং তার আগমন ঘটবে শেষ নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন প্রতিনিধি হিসেবে। তবে সাধারণ মানুষের উপর একজন নাবীর যে মযাদা সে মযাদায় অলংকৃত হয়েই তিনি গোটা ইসলামী উম্মাহর নেতৃত্ব দান করবেন। তখন সকল মিথ্যা ধর্মমতের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে এবং গোটা পৃথিবীর মানুষ একমাত্র দ্বীন ‘ইসলাম’ এর অন্তর্ভুক্ত হবে। তার আগমনের মাধ্যমে এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন ঘটানো হবে যে, তাকে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়নি, তিনি আল্লাহর পুত্র নন। তার উম্মাতের গুনাহের কাফফারা হবার কাহিনীও সম্পুর্ণ অলীক।
|
|||
অনেক প্রাচীন কালের কাহিনী এটি। এক রাজা তার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে একজন সৎ ও আল্লাহভীরু কোষাধ্যক্ষ (Treasurer) নিযুক্ত করতে চাইলেন। যে কিনা হাজারো সুযোগ থাকা সত্বেও কোষাগারের একটি পয়সাও এদিক সেদিক করবেনা। কিন্তু কিভাবে বাছাই করা যাবে এমন ভাল লোক? অনেক চিন্তা ভাবনার পর তিনি এ পদের প্রার্থীদের আগমনের পথে একটি সুরংগ নির্মাণ করলেন এবং অতি গোপনে একজন বিশস্ত সংগী নিয়ে সুরংগ পথের এখানে সেখানে বেশ কিছু স্বর্ণমুদ্রা ফেলে রাখলেন। ইন্টারভিউ গ্রহণের দিন ঘনিয়ে এল। রাজা নির্দেশ দিলেন, কোষাধ্যক্ষ পদের প্রার্থীগন যেন একজন একজন করে এ সুরংগ পথ দিয়ে রাজার কাছে আসে এবং অবশ্যই একাকী আসতে হবে। সাক্ষাতকার শুরু হল। বহু লোক এল পরীক্ষা দিতে। সাক্ষাতকার পবের ফাকে রাজা কৌশল করে সকলেরই পকেট ও পোষাক তল্লাশী নিলেন। কেবল মাত্র একজন ছাড়া সকলেরই পকেটে কিছু কিছু স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেল। রাজা সকলকে ডিসকোয়ালিফাইড করলেন, কেবল ঐ লোকটি ছাড়া, যার পকেটে কোন স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়নি।
|
|||
অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক রাজার মাথায় অদ্ভুত এক খেয়াল চাপলো: তিনি পরীক্ষা করবেন যে, “ভাগ্য কি স্রষ্টা নির্ধারিত কোন বিষয়? নাকি চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে মানুষ তা লাভ করে!” কিন্তু কিভাবে তিনি তা পরীক্ষা করবেন? অনেক ভেবে চিন্তে তিনি এক পরিকল্পনা আটলেন। তবে কাউকে তা বললেননা। তিনি গোপনে রাজবাবুর্চীকে দিয়ে দু’টি রুটি তৈরী করালেন। এর মধ্যে একটির ভেতরে ছোট ছোট স্বর্ণের টুকরা এমনভাবে ঢুকালেন যেন বাইরে থেকে কিছুই আচ করা না যায়। যেমন গোপনে রুটি তৈরী করালেন তেমনি গোপনে তা বিতরণেরও উদ্দোগ নিলেন রাজা। ছদ্ধবেশে একজন বিশ্বস্ত সংগী নিয়ে লোকালয়ের উদ্দ্যেশে বের হলেন তিনি। রাস্তার মোড়ে দু’জন ভিক্ষুক পেয়েও গেলেন। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দু’টি রুটি তিনি দু’জনকে দান করলেন এবং এক জায়গায় লুকিয়ে রইলেন। রুটি দু’টু নিয়ে দু’জন কি করে তা তিনি প্রত্যক্ষ করবেন।
|
|||
আতা ইবনু আবী রাবাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে, একদিন আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন: আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব? আমি বললাম: অবশ্যই। তিনি বললেন: এই যে কালো মহিলাটি দেখছো, একদিন সে রাসুলুল্লাহর সা: নিকট এসে বললো: হে আল্লাহর রাসুল, আমি একজন মৃগী রোগী। প্রায়শ:ই আমি এ রোগের কারনে উলংগ হয়ে পড়ি। আপনি আমার জন্য দুয়া করুন যেন আমি এ রোগ থেকে সম্পুর্ণ আরোগ্য লাভ করি। জওয়াবে রাসুলুল্লাহ সা: বললেন: যদি তুমি ধৈযধারণ কর তাহলে তোমার জন্য জান্নাত। আর যদি চাও তো, আমি তোমার জন্য দুয়া করব যাতে তুমি এ রোগ থেকে সম্পুর্ণ আরোগ্য লাভ করতে পার। মহিলাটি বললো: আমি ধৈযধারণই করবো, তবে আপনি আমার জন্য দুয়া করুন, যাতে আমি এ রোগের প্রকোপে উলংগ না হয়ে পড়ি। রাসুলুল্লাহ সা: তার জন্য সেরুপ দুয়া করলেন। (বুখারী ৯৯/১০। মুসলিম ২৫৭৬ । মুল আরবী)
|
|||
