'আতাউর রহমান সিকদার' -এর ব্লগ
অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক রাজার মাথায় অদ্ভুত এক খেয়াল চাপলো: তিনি পরীক্ষা করবেন যে, “ভাগ্য কি স্রষ্টা নির্ধারিত কোন বিষয়? নাকি চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে মানুষ তা লাভ করে!” কিন্তু কিভাবে তিনি তা পরীক্ষা করবেন? অনেক ভেবে চিন্তে তিনি এক পরিকল্পনা আটলেন। তবে কাউকে তা বললেননা। তিনি গোপনে রাজবাবুর্চীকে দিয়ে দু’টি রুটি তৈরী করালেন। এর মধ্যে একটির ভেতরে ছোট ছোট স্বর্ণের টুকরা এমনভাবে ঢুকালেন যেন বাইরে থেকে কিছুই আচ করা না যায়। যেমন গোপনে রুটি তৈরী করালেন তেমনি গোপনে তা বিতরণেরও উদ্দোগ নিলেন রাজা। ছদ্ধবেশে একজন বিশ্বস্ত সংগী নিয়ে লোকালয়ের উদ্দ্যেশে বের হলেন তিনি। রাস্তার মোড়ে দু’জন ভিক্ষুক পেয়েও গেলেন। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দু’টি রুটি তিনি দু’জনকে দান করলেন এবং এক জায়গায় লুকিয়ে রইলেন। রুটি দু’টু নিয়ে দু’জন কি করে তা তিনি প্রত্যক্ষ করবেন।
|
|||
আতা ইবনু আবী রাবাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে, একদিন আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন: আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব? আমি বললাম: অবশ্যই। তিনি বললেন: এই যে কালো মহিলাটি দেখছো, একদিন সে রাসুলুল্লাহর সা: নিকট এসে বললো: হে আল্লাহর রাসুল, আমি একজন মৃগী রোগী। প্রায়শ:ই আমি এ রোগের কারনে উলংগ হয়ে পড়ি। আপনি আমার জন্য দুয়া করুন যেন আমি এ রোগ থেকে সম্পুর্ণ আরোগ্য লাভ করি। জওয়াবে রাসুলুল্লাহ সা: বললেন: যদি তুমি ধৈযধারণ কর তাহলে তোমার জন্য জান্নাত। আর যদি চাও তো, আমি তোমার জন্য দুয়া করব যাতে তুমি এ রোগ থেকে সম্পুর্ণ আরোগ্য লাভ করতে পার। মহিলাটি বললো: আমি ধৈযধারণই করবো, তবে আপনি আমার জন্য দুয়া করুন, যাতে আমি এ রোগের প্রকোপে উলংগ না হয়ে পড়ি। রাসুলুল্লাহ সা: তার জন্য সেরুপ দুয়া করলেন। (বুখারী ৯৯/১০। মুসলিম ২৫৭৬ । মুল আরবী)
|
|||
প্রশ্ন : সূরা ইখলাস পাঠ করে কেউ যদি মৃত ব্যক্তিকে ঈসালে সাওয়াব করে, তাহলে মৃত ব্যক্তি কি উপকৃত হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কি করতেন, কবরবাসীর জন্য তিনি কি তিলাওয়াত করতেন, না শুধু দোয়া করতেন? উত্তর : প্রথমত : আরব বিশ্বের সকল ইসলামী চিন্তাবিদ ও উলামাবৃন্দের মতানুযায়ী এ সাওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছায় না, কারণ এটা মৃত ব্যক্তির আমল নয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ﴿وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى﴾ {আর এই যে, মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পায়।} {সূরা নাজম: ৩৯} এ তিলাওয়াত জীবিত ব্যক্তির চেষ্টা বা আমল, এর সাওয়াব সে নিজেই পাবে, অন্য কাউকে সে ঈসালে সাওয়াব করার অধিকার রাখে না। এ সংক্রান্ত সৌদি আরবের “ইলমি গবেষণা ও ফতোয়ার স্থায়ী ওলামা পরিষদ” এর ফাতওয়া নিম্নরুপ : প্রশ্ন :
|
|||
কুরআন কারিম থেকে.. আমি অবশ্যই একদিন মৃতদেরকে জীবিত করবো, যা কিছু কাজ তারা করেছে তা সবই আমি লিখে চলছি এবং যা কিছু চিহ্ন তারা পেছনে রেখে যাচ্ছে তাও আমি স্থায়ী করে রাখছি৷ প্রত্যেকটি জিনিস আমি একটি খোলা কিতাবে লিখে রাখছি৷ (সুরা ইয়াসীন, ১২) ব্যাখ্যা: এ থেকে জানা যায়, মানুষের আমলনামা তিন ধরনের বিষয় সম্বলিত হবে। এক: প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু ভালো-মন্দ কাজ করে তা আল্লাহর দফতরে লিখে নেয়া হয়। দুই: নিজের চারপাশের বস্তুসমূহের এবং নিজের শরীরের অংগ-প্রত্যংগের ওপর মানুষ যে প্রভাব (Impression) রাখে তাও সব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং এ সমস্ত চিহ্ন এক সময় এমনভাবে সামনে ভেসে উঠবে যে, তার নিজের আওয়াজ শোনা যাবে, তার নিজের চিন্তা, নিয়ত ও ইচ্ছা-সংকল্পসমূহের সমস্ত কথা তার মানসপটে লিখিত আকারে দৃষ্টিগোচর হবে এবং এক একটি ভাল ও মন্দ কাজ এবং তার সমস্ত নড়াচড়া ও আচরণের ছবি সামনে এসে যাবে।
|
|||
ঈসা আ: এর শুলে চড়ানো সম্পর্কে বার্নাবাস যা লিখেছেন: ঈসা আলাইহিস সালাম এর বিশ্বস্ত সংগী বার্নাবা-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, ঈসা আ: এর সংগীদের মধ্য থেকেই একজন, যার নাম ছিল জুদাস – কিছু অর্থের বিনিময়ে ইয়াহুদীদেরকে ঈসা আ: এর গোপন স্থানের সন্ধান বলে দেয়। সেমতে রোমান সৈন্যগণ ঈসা আ: এর আশ্রয় স্থানে হানা দেয়। অন্যদিকে আল্লাহ তায়ালা ঈসা আ: কে আকাশে উঠিয়ে নেন এবং বিশ্বাসঘাতক জুদাসের চেহারা, কন্ঠ ইত্যাদি সবই ঈসা আ: এর মতো পরিবর্তিত করে দেন। অত:পর সৈন্যরা তাকেই ঈসা মনে করে ধরে নিয়ে যায় ও শুলে বিদ্ধ করে (প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহর নিকট)। সেন্ট লুক লিখেছেন: “ইয়াহুদী প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা ঈসাকে গোপনে মারিয়া ফেলিবার উপায় খুজিতেছিলেন, কারন তাহারা লোকদের ভয় করিতেন। এই সময় এহুদা (জুদাস) যাকে ইস্কারিয়োৎ বলা হইত, তাহার ভিতর শয়তান ঢুকিল। এই এহুদা ছিল ঈসার বারোজন সংগীর মধ্যে একজন”। (ইঞ্জিল-লুক ২২: ২-৩) ঈসা আ: এর সাবক্ষণিক বিশ্বস্ত সংগী বার্ণাবা লিখেছেন:
|
|||
“আমি এগুলোকে ইনসান জাতীর হাতে অসহায় ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এনে দিয়েছি। অত:পর এগুলোর মধ্য থেকে কারোর ওপর এরা সওয়ার হয়, কারোর গোশত খায় (সুরা ইয়াসীন, ৭২) ব্যাখ্যা: উট, গরু, ঘোড়া, হাতি, মহিষ, ইত্যাকার প্রাণী মানুষ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী। ফলে এসব জন্তু মানুষের বশীভুত না থাকাই ছিল যুক্তিসংগত। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, মানুষ তার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিমান উট, গরু, ঘোড়ার মুখে লাগাম পরিয়ে তাদেরকে যথেচ্ছ কাজে খাটাচ্ছে। একবার দেখলাম, এক কৃষক তার হালের গরুকে পিটাচ্ছে, গরুটি বাম পায়ে লাঠির ঘা খেয়ে শরীর ডান দিকে কুঞ্চিত করে নিচ্ছে, আবার ডান পা’য়ে আঘাত খেয়ে শরীর বাম দিকে কুঞ্চিত করছে। কিন্তু আহা! মুখে কিছু বলার শক্তি পযন্ত তার নেই। অথচ এ ষাড়ের এক গুতোয় কৃষকের দফা রফা হয়ে যেতে পারতো। অনুরুপ, ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগী। মানুষের হাত থেকে পালানোর সাধ্য কারোর নেই। নদী সমুদ্রের মৎসকুলকেও আল্লাহ এমন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন যে, অতি সহজেই মানুষ তাদেরকে শিকার করে খেতে পারে।
|
|||
وَآثَارَهُمْ অর্থ তাদের সম্পাদিত কর্মসমুহের ন্যায়, কর্মসমুহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও লিপিবদ্ধ করা হয়। آثَارَ এর অর্থ কর্মের ক্রিয়া তথা ফলাফল, যা পরবর্তীকালে প্রকাশ পায় ও টিকে থাকে। উদাহরণত: কেউ মানুষকে দ্বীনি শিক্ষা দিল, বিধি বিধান বর্ণনা করল অথবা কোন পুস্তক রচনা করল যদ্বারা মানুষের দ্বীনি ফায়দা হয় বা ওয়াকফ ইত্যাদি ধরণের কোন জনহিতকর কাজ করল – তার এই সৎকর্মের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যতদুর পৌছাবে এবং যতদিন পযন্ত পৌছাতে থাকবে, সবই তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকবে। অনুরুপভাবে কোন রকম মন্দকর্ম যার মন্দ ফলাফল ও ক্রিয়া ক্রিয়া পৃথিবীতে থেকে যায় – কেউ যদি নিপীড়নমুলক আইন কানুন প্রবর্তন করে কিংবা এমন কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে যা মানুষের আমল আখলাককে ধ্বংস করে দেয় কিংবা মানুষকে কোন মন্দ পথে পরিচালিত করে, তবে তার এ মন্দ কর্মের ফলাফল ও প্রভাব যে পযন্ত থাকবে এবং যতদিন পযন্ত তা দুনিয়াতে কায়েম থাকবে ততদিন তার আমলনামায় সব লিখিত হতে থাকবে। যেমন এ আয়াতের তাফসীর প্রসংগে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
|
|||
“অথচ আমি তাদের আগেকার সবাইকে পরীক্ষা করেছি। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক”। সুরা আল আনকাবুত, ৩ আয়াতটির ব্যাখ্যা: অর্থাৎ তোমাদের সাথে যা কিছু হচ্ছে, তা কোনো নতুন ব্যাপার নয়। ইতিহাসে হরহামেশা এরুপই হয়ে এসেছে। যে ব্যক্তিই ইমানের দাবী করেছে তাকে পরীক্ষার অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে দগ্ধ করা হয়েছে। “মুল শব্দ হচ্ছে فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ এর শাব্দিক অনুবাদ হবে ‘আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন’ – একথায় কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহতো সত্যবাদীর সত্যবাদীতা এবং মিথ্যুকের মিথ্যাচার সম্পর্কে সরাসরি জানেন, পরীক্ষা করে তা আবার জানার প্রয়োজন কেনো?
|
|||
আমার প্রিয় কন্যা, সবার আগে এক কোম্পানী মালিকের উত্থান পতনের কাহিনী তোমাকে শোনাবো, আমি নিজে যার প্রত্যক্ষদর্শী। কোম্পানীটির প্রতিষ্ঠা ১৯৯৪ সালে জেদ্দায়। এক্সিকিউটিভ ম্যানেজারের ব্যক্তিগত গুনাবলী, সততা ও দক্ষতায় তিন বৎসরের মধ্যেই সারা সৌদী আরবে এর ৮টি শাখা ওপেন হয় এবং ষ্টাফসংখ্যা ২০ থেকে ২৫০ এ গিয়ে পৌছে। এত দ্রুত ব্যবসায়িক সাফল্যে মালিক পক্ষের খুশীর অন্ত ছিলনা। লভ্যাংশও ছিল অকল্পনীয়। এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার একটানা প্রায় বারো বছর এ সাফল্য ধরে রাখেন। কিন্তু সফলতা ও সমৃদ্ধির এ জোয়ার হঠাৎ-ই একদিন থমকে দাড়ায়। কেন, সেটাই বলছি। একজন কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার এবং সেলস ম্যানেজারের মধ্যে দ্বন্ধ বাধে। সেলস ম্যানেজারের মনে আল্লাহভীতির অভাব ছিল। সে গোপনে (প্রায় বছরব্যাপী কাঠ খড় পুড়িয়ে) মালিক পক্ষ এবং বিশেষভাবে ডাইরক্টর বোর্ডের প্রেসিডেন্টকে এক্সিকিউটিভ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে। লভ্যাংশ প্রদানে জালিয়াতির অভিযোগও করা হয়। যা ছিল অসত্য।
|
|||
হে পুত্র! নামায কায়েম করো। সৎকাজের হুকুম দাও এবং খারাপ কাজে নিষেধ করো অত:পর একারনে যদি বিপদে বা মুসিবতে পতিত হও তাহলে সবর করো৷ নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ (আল কুরআন। সুরা লোকমান ১৭) ব্যাখ্যা: ...” এজন্য নামাজের ন্যায় অবশ্য করণীয় গুরুত্বপুর্ণ কাজের সাথে সাথেই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ – এই অবশ্য করণীয় কর্তব্যের বর্ণনাও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- মানুষকে সৎ কাজের প্রতি আহবান কর ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখ। (এক) নিজের পরিশুদ্ধি (দুই) গোটা মানবকুলের পরিশুদ্ধি – এর উভয়টাই পালন করতে বেশ দু:খ কষ্ট বরদাশত করতে হয়, শ্রম সাধনার প্রয়োজন হয়। এর উপর দৃঢ় থাকা খুব সহজ ব্যাপার নয়। বিশেষ করে সৃষ্টিকুলের পরিশুদ্ধির উদ্দেশ্যে সৎকাজের আদেশের প্রতিদানে দুনিয়ায় সবদা শত্রুতা ও বিরোধীতাই জুটে থাকে। সুতরাং এ উপদেশের সাথে সাথে এরুপ উপদেশও প্রদান করা হয়েছে “এসব কাজ সম্পন্ন করতে যে দু:খ কষ্টের সম্মুখীন হবে, তাতে ধৈযধারণ করে স্থিরতা অবলম্বন করবে”।
|
|||
