'আতাউর রহমান সিকদার' -এর ব্লগ
“সেদিন সে তার নিজের (তার উপর যা কিছু ঘটেছে) সব অবস্থা বর্ণনা করবে” (সুরা আয যিলযাল, আয়াত ৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পড়ে সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন: "তোমরা কি জানো তার সেই অবস্থা কি? লোকেরা বললো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা:) ভালো জানেন। তখন রাসুল (সা) বললেন: "সেই অবস্থা হচ্ছে, যমীনে (পৃথিবীতে) প্রত্যেক মানব মানবী যে কাজ করবে সে তার সাক্ষ্য দেবে। সে বলবে, এই ব্যক্তি উমুক দিন একাজ করেছিল। (মুসনাদ আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ। বর্ণনাকারী: আবু হুরাইরা রা:) আর একটি হাদিসে বর্ণিত: " কিয়ামতের দিন যমীন এমন প্রতিটি কাজ নিয়ে আসবে, যা তার পিঠের ওপর করা হয়েছে। " তারপর তিনি এই আয়াতটি তেলাওয়াত করেন। (মুসলিম, তিরমিযি। বর্ণনাকারী: আনাস ইবনু মালিক রা:)
|
|||
ঘটনাটি ইংরেজ আমলের। এক ব্যক্তির মহিষ চুরি হলে সে ইংরেজের কোর্টে মামলা দায়ের করে। আসামী করা হয় তারই এক প্রতিবেশীকে। ইংরেজ জজ একজন বিজ্ঞ মানুষ ছিলেন, ন্যায় বিচারের খ্যাতিও ছিল তার। বাদী অর্থাৎ যার মহিষ চুরি হয় সে ছিল হিন্দু। নাম যাদব। আর যাকে আসামী করা হয় সে ছিল মুসলিম। নাম আবদুল করিম। বিচারের দিন ইংরেজ জজ যাদবকে জিজ্ঞেস করলেন: যাডব, টোমার কোন সাক্ষী আছে? যাদব বললো: হ্যা আছে। আসামীর বড় ভাই আবদুল আযিয। আবদুল আযিয একজন মুত্তাকী পরহেজগার লোক ছিলেন। সততা ও আমানতদারীতে তিনি এতটাই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন যে, যাদব জানতো, দুনিয়া উল্টে গেলেও এ ব্যক্তি কখনো মিথ্যা কথা বলবেননা। তাই আসামীর সহোদর হওয়া সত্বেও যাদব তাকেই নির্দ্বিধায় সাক্ষী মানে। সাক্ষী আবদুল আযিযকে কোর্টে এসে সাক্ষ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। আবদুল আযিয বললেন: আমি ইংরেজের মুখ দর্শন করিনা। কোর্টে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।
|
|||
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট প্রথম অহী নাযিলের পর উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) রাসুলুল্লাহকে (সা:) সংগে নিয়ে ওয়ারাকা ইবনু নাওফিলের নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি ছিলেন তার চাচাতো ভাই। আরবী ও হিব্রু ভাষায় ইনজিল কপি করতেন। খাদিজা রা: তাকে বললেন: ভাইজান আপনার ভাতিজার ঘটনাটা একটু শুনুন। ওয়ারাকা রাসুলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন: ভাতিজা, তুমি কি দেখতে পেয়েছো? রাসুলুল্লাহ সা: অহী নাযিলের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করলেন। শুনে ওয়ারাকা বললেন: এতো সেই নামুস (ওহী বহনকারী ফেরেশতা) যাকে আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিস সালামের নিকট পাঠাতেন। হায়! আমি যদি তোমার নবুয়াত কালে যুবক বয়সের হতাম! হায়! তোমার জাতির লোকেরা যখন তোমাকে বহিস্কৃত করবে তখন যদি আমি জীবিত থাকতাম!
|
|||
ইতিহাসলদ্ধ জ্ঞান ও শিক্ষা কখনো কখনো মানুষের মন ও মগজে এক অব্যর্থ ব্যবস্থাপত্র হিসেবে কাজ করে থাকে। একারনেই ইতিহাসের যতটুকু অংশ শিক্ষা ও উপদেশের জন্য অত্যাবশ্যক কুরআন কারিমে ঠিক ততটুকু অংশই বিবৃত করা হয়েছে এবং কোথাও কোথাও প্রয়োজন ও পরিবেশ পরিস্থিতির দাবীতে পুনবার তা ব্যক্ত করা হয়েছে, মানব জাতিকে কিচ্ছা শোনানোর উদ্দেশ্যে নয়। আর এটাতো জানা কথা যে, যে দায়িত্ব দিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠানো হয়েছিল তা পুণতার চুড়ান্ত মনযিলে পৌছা অবধি এ কুরআন তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও চাহিদা অনুসারে ক্রমান্বয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ কুরআনের প্রতিটি কথা ও আয়াত নাযিলের রয়েছে বিশেষ বিশেষ এবং আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপট। সুতরাং কাহিনী বর্ণনায় ঘটনার সাংঘটনিক (Event) ধারাবাহিকতা অনুপস্থিত থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কুরআনের এ বিশেষ বর্ণনা রীতিতে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এ গ্রন্থ কোন ইতিহাসের বই নয়, অতীত হয়ে যাওয়া লোকদের কাহিনী পরিবেশন করা কুরআনের লক্ষ্য নয়। বরং আসল উদ্দেশ্য, মানব জাতির সামনে শিক্ষা, উপদেশ ও দৃষ্টান্ত উপস্থাপন।
|
|||
আল্লাহ তায়ালা অবাধ্যকে অবকাশ দিয়ে তাওবা ও সংশোধনের সুযোগ দেন। তিনি বলেন:
“ আল্লাহ যদি মানুষের এহেন যুলুম ও অবাধ্যতার কারনে তাদেরকে সাথে সাথেই পাকড়াও করতেন তবে ভুপৃষ্টে চলমান কোন কিছুকেই ছেড়ে দিতেননা (অর্থাৎ বেচে থাকতোনা)। কিন্তু তিনি একটি নির্ধারিত সময় পযন্ত সবাইকে অবকাশ দেন। অত:পর যখন সেই সময়টি এসে যায় তখন তা থেকে এক মুহুর্তও আগ পিছ হয়না” (সুরা আন নাহল, আয়াত ৬১)। “একটি নির্দিষ্ট সময় পযন্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত মুলতবী রাখা হবে একথা যদি তোমার রব পুবেই ঘোষণা (লিপিবদ্ধ) না করতেন তাহলে তাদের বিবাদের চুড়ান্ত ফয়সালাতো সাথে সাথেই করে দেয়া হতো” (সুরা আশ শুরা, আয়াত ১৪)।
|
|||
এ জগত সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে কুরআন : “এ আকাশ ও পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা কিছুই আছে এগুলো আমি খেলাচ্ছলে তৈরী করিনি। যদি আমি কোনো খেলনা তৈরী করতে চাইতাম অথবা এমনি ধরণের কিছু, তাহলে নিজেরই নিকট থেকে করে নিতাম” (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত ১৬-১৭) অর্থাৎ আল্লাহ বলেন যে, যদি আমি খেলা করতেই চাইতাম তাহলে খেলনা বানিয়ে নিজেই খেলতাম। এ অবস্থায় একটি অনুভুতিশীল, সচেতন ও দায়িত্বশীল প্রাণী সৃষ্টি এবং তার মধ্যে সত্য-মিথ্যার এ দ্বন্ধ ও টানা হেচড়ার অবতারণা করে নিছক নিজের আনন্দ ও কৌতুক করার জন্য এবং অন্যকে অনর্থক কষ্ট দেবার মতো যুলুম কখনোই করা হতোনা। এখানে মানুষদেরকে পরস্পরের মধ্যে লড়াই করিয়ে তাদের শরীরের গোশত ছিড়ে উৎক্ষিপ্ত করিয়ে আনন্দে অট্রহাসি হাসার জন্য এ বিশ্ব সৃজিত হয়নি। একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দ্যেশ্য নিয়ে পৃথিবীর এ আয়োজন এবং জন্ম মৃত্যুর এ ধারাবাহিকতা। তা হচ্ছে এই যে,
|
|||
সংখ্যাধিক্য কি হকপন্থী হবার দলিল? কুরআন কারিম এ প্রশ্নের জওয়াব দিয়েছে এভাবে: “আর হে মুহাম্মাদ! যদি তুমি দুনিয়ায় বসবাসকারী অধিকাংশ লোকের কথায় চলো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে৷ তারা তো চলে নিছক আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে ......”(সুরা আল আনআম ১১৬) । অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ, এ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আকড়ে ধরে আছে ভ্রষ্ট পথ ও বাতিল ধর্মবিশ্বাসকে। তুমি এতে ভীত হয়োনা, এদের কথাবার্তায় কর্ণপাত করোনা। তুমি যদি তাদের চিন্তাধারার অনুসরণ কর তাহলে তারা তোমাকে বিপথগামী করে ছাড়বে কেননা তারা বিশ্বাস ও মতবাদে শুধুমাত্র কল্পনা, আন্দাজ অনুমান ও কুসংস্কারের পেছনে চলে। কুরআন কারিমের আরও কয়েক জায়গায় এই একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলা হয়েছে যে, মুমিনরা যেন বাতিল ধর্মপন্থার অনুসারীদের সংখ্যাধিক্যে বিভ্রান্তিতে না পড়ে। কারন সংখ্যাধিক্য হকপন্থার দলিল নয়।
|
|||
খুবই কম দামে পাওয়া যায় ফরমালিন। এ কারনে এর ব্যবহারও হচ্ছে বেশী। ঢাকার প্রায় সবত্রই পাওয়া যায় এই রাসায়নিক। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানেও খুব কম দামে বিক্রি হচ্ছে দেদার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ... পচনশীল কোন কিছুতে ফরমালিন ব্যবহার করা হলে তা পচেনা, সব সময় সতেজ থাকে। ফরমালিনের এ গুনের কারনেই দীর্ঘ সময় সতেজ রাখার উদ্দেশ্যে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী পচনশীল দ্রব্যে এই রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকে। মুলত: ল্যাবরেটরীতে অংগপ্রত্যংগ দীর্ঘ দিন সংরক্ষিত রাখতে এই রাসায়নিক ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য লাশ সংরক্ষণ করে প্রয়োজনীয় অংশ কেটে আলাদা করে দেখানোর সুবিধার্থে এটি ব্যবহার হয়। ফরমালিন এখন ল্যাবরেটরী ছেড়ে ব্যবহার হচ্ছে মাছ, গোশত, ফল এমনকি শাকসবজিতেও। বাজারে দেখা যায়, বিক্রেতা কিছুক্ষণ পর পর পানি স্প্রে করছে। জানা গেছে, এ পানি ফরমালিন মিশ্রিত। ফলে এখন আর সবজির দোকানে কোন পচা গলা শাকসবজি পাওয়া যায়না।
|
|||
মুহাদ্দিসগন একযোগে যে কারনে আয়িশা রা: এর বক্তব্যকে চুড়ান্ত বলে রায় দিয়েছেন এবং অন্যদের উপর তাকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন তার রয়েছে বহু যৌক্তিক কারন। যেমন:
১- বার বার জিজ্ঞেস করে নেয়া: আয়িশা রা: এর বর্ণনায় ভুল কম হওয়ার একটি বিশেষ কারন এই যে, অন্যান্য সাহাবীগন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একবার কোন কথা শুনে বা দেখেই বর্ণনা করতেন। কিন্তু আয়িশা রা: এর নীতি ছিল, যতক্ষণ পযন্ত কোন বিষয় ভাল করে বুঝতে না পারতেন, ততক্ষণ সেটা বর্ণনা করতেন না। যদি রাসুল সা: এর কোন কথা বুঝে না আসতো, তাহলে বার বার জিজ্ঞেস করে সেটা স্পষ্ট করেই ক্ষান্ত হতেন (বুখারী, কিতাবুল ইলম)। এরকম সুযোগ অন্যদের বেলায় পাওয়া কঠিন ছিলো। ২- ব্যক্তিগত অবগতি:
|
|||
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর একটি বর্ণনা আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’বার তার প্রভুর দর্শন লাভ করেছেন। তাবেঈ মাসরুক (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আম্মাজান, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি সত্যই আল্লাহকে দেখেছেন? আয়িশা রা: বিস্ময়ের স্বরে বললেন: পুত্র, তোমার কথা শুনে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। ............. অত:পর তিনি নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন:
“ দৃষ্টি-শক্তি তাকে ধরতে পারেনা (অর্থাৎ দেখতে সক্ষম নয়) কিন্তু তিনি দৃষ্টি-শক্তিকে ধরতে পারেন (সবাইকে তিনি দেখেন”। (সুরা আল আনআম ১০৩) এরপর এ আয়াতটিও তিলাওয়াত করলেন: “কোন মানুষেরই এই শক্তি নেই যে, সে আল্লাহর সংগে কথা বলবে। তবে ওহীর মাধ্যমে কিংবা পর্দার অন্তরালে”। (সুরা আশ শুরা ৫১)
|
|||
