'আতাউর রহমান সিকদার' -এর ব্লগ
একবার কতক সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে এসে বললেন: আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলছেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুলুক্ষুণে তিনটি বস্তু: নারী, ঘোড়া, ঘর। কথাটি কি ঠিক? শুনে আয়িশা রা: বললেন: কথাটি ঠিক নয়। আসলে আবু হুরাইরা রা: কিছু কথা শুনেছেন, কিছু শুনেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম অংশ বলে ফেলার পর আবু হুরাইরা রা: এসেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন: “ইয়াহুদীরা বলে, কুলুক্ষুণে তিনটি বস্তু: নারী, ঘোড়া, ঘর”। সুত্র: আবু দাউদ। তায়ালিসি: মুসনাদ আয়িশা রা:। সীরাতে আয়িশা রা: - সাইয়েদ সুলাইমান নদভী রহ:।
|
|||
“ মাইয়েতকে তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটির জন্য শাস্তি দেয়া হয়” – কথাটি হাদিস হিসেবে মাশহুর। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথাটি এভাবে বলেননি অর্থাৎ এটা বোঝাননি। আয়িশা রা: যখন হাদিসটি শুনলেন, মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই একথা বলতে পারেননা। প্রকৃত ঘটনা এই যে, একবার তিনি এক ইয়াহুদী মহিলার মৃতদেহের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। মাইয়েতের কোন এক আত্বীয় কান্নাকাটি করছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “এ এখানে কাদছে আর ওখানে ওকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে”। আয়িশা রা: এর কথার অর্থ হলো: যেমনটি বুখারীতে বদর যুদ্বের আলোচনায় এসেছে – আত্বীয়ের কান্না মাইয়েতের শাস্তির কারন নয়। দু’টু আলাদা আলাদা বিষয়। অর্থাৎ আত্বীয় কাদছে মাইয়েতের মৃত্যুর কারনে, আর মাইয়েতের আযাব হচ্ছে তার কৃত পাপের কারনে। এর আযাব যে কাদছে সে-ই ভোগ করবে। মাইয়েত কেন সেজন্য দায়ী হবে? সবাইকে নিজের আমলেরই সাজা ভোগ করতে হবে। এ প্রসংগে আয়িশা রা: একটি আয়াতও উল্লেখ করেন:
|
|||
বাক স্বাধীনতা প্রতিটি ইনসানের একটি জন্মগত অধিকার। প্রতিটি মা যেমন তার সন্তানকে স্বাধীন রুপে প্রসব করে (অর্থাৎ কোন মানুষের দাস নয়, বরং আল্লাহর দাস বা বান্দা হিসেবে) এ অধিকারও ঠিক তেমনি। কোনও শাসন দন্ড বা কর্তৃত্ব তার এ অধিকার হরণ না করলে মৃত্যু পযন্ত এ অধিকারের উপরই সে বহাল থাকে। এটিই ইসলামের বিধান। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক এ সত্য ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণীত যে – বাক স্বাধীনতার ধারণা মানুষ নাবী রাসুলদের আনীত শিক্ষা ও নীতিমালা থেকেই লাভ করেছে এবং এ চেতনা, পৃথিবীতে আল্লাহর সৎ বান্দাদের শাসন ব্যবস্থারই ফলশ্রুতি। বাক স্বাধীনতার ঐতিহাসিক দলিল: আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন খলীফা হন তখন তিনি প্রজাসাধারণকে সম্মুখে রেখে একটি ভাষন দেন, তাতে তিনি বলেন:
|
|||
প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসে আমাদের গ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিল হতো। বক্তা দুরবর্তী অন্য একটি জেলা থেকে আসতেন। আমাদের এলাকায় তার অনেক মুরীদও ছিলো। একবার তিনি আমাদের বাড়ীতে রাত্রিযাপন করলেন। সকালবেলা ১০/১২ জন মহিলা এলো মৌলভী সাহেবের কাছে বাইয়াত নিতে। মৌলভী সাহেব তার লম্বা পাগড়ীটি খুলে দিলেন, মহিলারা পর্দার আড়ালে বসে তার পাগড়ী ধরলো এবং বাইয়াত করে মুরীদ হলো। আমি তখন ছোট। কাজটি ভালো কি মন্দ কিছুই বুঝিনা, তাই ভয়ে ভয়ে আমার এক বোনকে সুধালাম: এমন কেন করা হচ্ছে? সে আমাকে যা বোঝাল তার মর্ম এই: এ পীরের পাগড়ী ধরার উছিলায়, হতে পারে হাশর দিবসে তারা পুলছিরাত পার হয়ে যাবে। এমন প্রথা আজো বাংলাদেশের কোথাও আছে কিনা জানিনা। হয়তো নেই। তবে মুরীদ হয়ে গেলে (কোনও পীরের নিকট) তেমন ভয়ের কোন কারন নেই – এহেন ধারণা কতক মানুষের মনে আজো প্রবল। মুরীদের চরিত্র ও কর্ম যা-ই হোকনা কেন।
|
|||
এটি খুবই অবাক ব্যাপার যে, কেউ একজন কুরআন কারিমের সত্যতার স্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে অথচ সে এ কিতাবের প্রথম আহবান নামাজীদের সাথে তাকে দেখা যাবেনা। অবাক ব্যাপার বলছি এজন্যে যে, কুরআন কারিমে যেখানেই ইমানের কথা এসেছে সেখানেই নামাজের কথা বলেছেন আল্লাহ। এমনও বলা হয়েছে যে, এ কিতাব তাদেরকেই হেদায়াতের পথ দেখাবে যারা গায়েবের উপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে (আল বাকারা ৩)। অবাক হবার কথা বলছি এজন্যে যে, আমাদের দেশের মাসজিদগুলোতে যখন আযান ধ্বনিত হয় তখন মনে হয় এ আযান এসকল লোকদের উদ্দেশ্যে নয়, এ আহবান যেন অন্য কোন প্রজাতির নিমিত্ত। দোকানী তেমনি বেচাকেনা করছে, পথচারী, টিভি, সিনেমা, হৈ হল্লোড় ইত্যাদি ঠিক তেমনই চলছে, যেমনটা আযানের পুবমুহুর্তে ছিল। কোনো পরিবর্তন কোথাও নেই। অর্থাৎ এ মানুষগুলো যেন জানেই না যে, এ আযান কেন, কার উদ্দেশ্যে ধ্বনিত হচ্ছে। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার আসহাবদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) যুগে যে ব্যক্তি নামাজের জামায়াতে উপস্থিত না হতো তাকে মুসলিমই গন্য করা হতোনা।
|
|||
কোনও বিশেষ মওসুম বা উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের সুযোগ ইসলামে নেই। অথচ অত্যন্ত দু:খজনক যে, ঈদুল আজহা তথা কুরবানীকে উপলক্ষ্য করে এটা এখন দেদারসে হচ্ছে। খলীফা উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সময়ে মাক্কার বাসিন্দারা অতিরিক্ত মুনাফা করবে দুরে থাক তখন রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা এমন ছিল যে, তারা যেন নিজ নিজ বাড়ী ঘর মাক্কায় আগত হাজীদের জন্য বিনামুল্যে ছেড়ে দেয়। হজ উপলক্ষ্যে কুরবানীর পশুর মুল্য বৃদ্ধি ছিল দন্ডনীয় অপরাধ। সৌদী আরবে যারা ঈমানদার ব্যবসায়ী তারা এখনও এ কর্মকে হারাম বলেই গন্য করেন। আমি নিজে প্রত্যক্ষদর্শী, ২০১১ সালেও অনেক সৌদী নাগরিককে আমি 'হারাম' 'হারাম' বলে চিৎকার করতে দেখেছি। তারা বলতেন যে, হজকে উপলক্ষ্য করে কুরবানীর পশুর দাম বাড়ানো জায়েয নয়। এখন হয়েছে উলটো। বাংলাদেশে এটি এখন পান্তাভাত।
|
|||
খাইরুল কুরুণের মুসলিমগন কুরবানীর গোশত নি:স্ব/অভাবীদের মাঝে বিলি করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্ঠা করতেন। তারা বিশ্রাম নিতেননা যতক্ষণনা তারা তাদের চার পাশের নি:স্ব / অভাবীদের মধ্যে সে গোশত পৌছিয়েছেন। তারা শোনাতেন: “মনে রেখো, আল্লাহর কাছে কিন্তু কুরবানীর গোশত ও রক্ত পৌছায়না বরং তার নিকট পৌছায় তোমাদের তাকওয়াটুকু”। কুরবানীর তাৎপয তারা বোঝাতেন ত্যাগ দিয়ে আর এ যুগের মুসলিমগন (বিশেষ ভাবে এ উপমহাদেশের) কুরবানীর অর্থ খোজেন ভোগ ও প্রদর্শনেচ্ছার হাটে। তাদের কাছে এখন এটি একটি প্রথা বা উৎসব। অর্থাৎ কুরবানীর পশুটি হবে দেখার মতো। শত শত মানুষ দেখবে - অমুক কত্তো বড় গরুটি কুরবানী করলো। দাম যা-ই হোক। দাম দিয়ে কাজ কি? কুরবানী ইজ কুরবানী। কিন্তু কুরবানীর এ টাকাটা কিভাবে, কোন্ পথে এলো, তা হালাল কিনা এসব ভাববার কোন প্রয়োজন নেই। জনগনের পকেট এতে কাটা হলো কিনা, ফাইল ছাড়াতে ঘুষের রেট বাড়লো কিনা সে সৎ চিন্তার এখানে কোন আবশ্যকতা নেই।
|
|||
কোন ব্যক্তি বিশেষের অধিকার হরণ বা সম্পদ আত্বসাত করা হয়ে থাকলে হয়তোবা ঐ ব্যক্তিকে খুজে বের করে তার নিকট থেকে মাফ চেয়ে নেয়া কিংবা পাওনা পরিশোধ করে দেয়া সম্ভব। কিন্তু অর্থ আত্বসাত যদি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হয় তাহলে তা কিভাবে সম্ভব? বলা আবশ্যক যে, রাষ্ট্রীয় কোষাগার বলতে আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সমুদয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শাখাকে বোঝাচ্ছি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় যে, সে পাচ কোটি মানুষকে খুজে বের করে মাফ চাইল। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে ইনতেকাল হয়ে গিয়েছে তাদেরকে সে কিভাবে পাবে? ধরলাম সে ঐসকল মৃত লোকের উত্তরাধীকারীদের কাছে গেল কিন্তু তারা যদি মাফ না করে?
|
|||
আরবী عبادة ইবাদাহ শব্দটির অর্থ দাসত্ব, আনুগত্য ও মেনে চলা। ’আবদ’ শব্দের অর্থ দাস বা কেনা চাকর। বহুবচনে ’ইবাদ’। আর এ অর্থেই প্রতিটি মানুষকে বান্দা বা দাস নামে আখ্যায়িত করা হয়। কুরআন কারিমে যেখানেই ’আবদ’ عبد তা’বুদুন’ تعبدون’ আবিদুন’ عابدون 'ইবাদ’ عباد ইত্যাদি এসেছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, দাসত্ব ও তার আদেশ নিষেধের আজ্ঞাবহ হওয়া অর্থে এসেছে। সুরা আয যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন: "আমি জিন ও ইনসানকে আমার ইবাদাত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি"। অর্থাৎ আমি জিন ও মানুষ জাতিকে একমাত্র এ উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছি যে, তারা তাদের দুনিয়ার জীবনকে আমারই আনুগত্যের অধীনে পরিচালিত করবে, আমি যা করতে বলেছি তা করবে আর যা নিষেধ করেছি তা থেকে বিরত থাকবে।
|
|||
কুরআন কারিমে উল্লেখিত মানবভ্রণ (Human Embryology) এবং এর ক্রমবিকাশ সম্পর্কিত আয়াতগুলো ড. কিথ মুরকে (ভ্রুনত্বত্তের অধ্যাপক, টরন্টো ইউনিভার্সিটি, কানাডা) এত বেশি আশ্চযান্বিত ও মুগ্ধ করে যে, তিনি তাঁর পাঠ্যপুস্তকগুলোকে পরিবর্তন করেন। একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য ড. কিথ মুরের সাক্ষাৎকার নেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, এগুলো বিভিন্ন স্লাইডশো এবং অন্যান্য মাধ্যমে দেখানো হয়। কানাডা জুড়ে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয় ছিল সেটি। কয়েকটি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় তা ছাপা হয়। কিছু পত্রিকার শিরোণাম ছিল মজার। একটি পত্রিকা লিখে: ‘প্রাচীন গ্রন্থে আশ্চযজনক বিষয় প্রাপ্তি’। অর্থাৎ মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেনি যে, বিষয়টি কী। একটি পত্রিকার রিপোর্টার প্রফেসর মুরকে প্রশ্ন করেন: ‘আপনার কি মনে হয়না, ভ্রুণ এর অবস্থা এবং এটি কীভাবে পরিবর্তিত হয় ও বেড়ে ওঠে হয়তো আরবরা এসব বিষয় সম্পর্কে জানতো? হতে পারে, সেখানে কোন বিজ্ঞানী ছিলেন না, কিন্তু তারা কোনভাবে মানুষকে ব্যবচ্ছেদ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়।’
|
|||
