بسم ا لله ا لر حمن ا لر حيم মনীষীদের দৃষ্টিতে সিয়ামঃ আল্লামা ইবনে কইয়্যেম (রঃ): এ কথাটাই আরো স্পষ্ট করে এভাবে বলেছেন আল্লামা ইবনে কাইয়্যেমঃ“সিয়ামের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ যেনো তার স্বভাব ও কামনার জিঞ্জির থেকে মুক্ত হতে পারে । তার জৈবিক চাহিদা শক্তির মধ্যে যেনো ভারসাম্য সৃষ্টি হয় এবং এরই মাধ্যমে যেনো চিরন্তন কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথে নিজেকে পরিচালিত করতে পারে এবং এ উদ্দেশ্যে নিজের আন্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারে । সিয়ামের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের ক্ষুৎপিপাসার যন্ত্রণা যেনো তার কামনাকে নিয়ন্ত্রন করে এবং তার বিবেক-বুদ্ধিকে জাগ্রত করে দেয় । সে যেনো বুঝতে পারে, নিঃস্ব-ভুখা লোকদের কি বেদনা । নিজের প্রতি শয়তানের আক্রমণের পথকে যেনো সে সংকীর্ণ করে দিতে পারে । তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যেনো সেসব আকর্ষণ থেকে মুক্ত রাখতে পারে যাতে দুনিয়া ও আখিরাতের অকল্যাণ রয়েছে । এ হিসাবে সিয়াম মুক্তাকীদের লাগাম, মুজাহিদদের ঢাল এবং নেক্কারদের যুহদ ও পরহেযগারী”।“সিয়াম মানুষের বাহ্যিক অঙ্গ এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি হিফাযতে বড়ই প্রভাবশালী । মন-মগজে খারাপ চিন্তা ধূমায়িত হবার ফলে যেসব ক্ষতির আশংকা থাকে, সিয়াম তা থেকে মানুষকে হিফাযত করে । যা কিছু স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর সিয়াম সেসব দূরীভূত করে দেয় । কামনা-বাসনার পরিণতিতে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সেসব খাবাবীতে লিপ্ত হয়, সিয়াম সেগুলো দমন করে দেয় । সিয়াম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং তাকওয়া ও পরহেযগারীর জন্য সাহায্যকারী”।আবদুল কাদের জিলানী (রঃ): মাহে রামাদান সম্পর্কে আবদুল কাদের জিলানী (রঃ)-এর উপদেশঃ“জেনে রাখো, রামাদানই পবিত্রতা অর্জন ও আত্মশুদ্ধির মাস । এ মাস খোদার অনুগত বান্দাহদের মাস । সেসব লোকদের মাস, যারা আল্লাহর স্মরণে অন্তরকে সিক্ত রাখে ।ঐসব লোকদের মাস, সত্য ও সবর যাদের ভূষণ । এ মাস যদি তোমার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে না পারে, গুনাহ থেকে তোমাকে বিরত রাখতে না পারে, বেদআতপন্থী ও বদকারদের সংশ্রব থেকে ফিরিয়ে রাখতে না পারে, তবে আর কোন জিনিস তোমাকে এসব জিনিস থেকে হেফাজত করবে? এরচেয়ে উত্তম কোনো জিনিস কি আছে, যা তোমার উপর প্রভাব ফেলতে পারবে? এমতাবস্থায় তোমার দ্বারা কোনো নেক কাজের আশা করা যায় না এবং তোমার পক্ষে কোনো বদ কাজ থেকে বিরত থাকারও সম্ভবনা দেখা যায়না । মুক্তি ও নাজাতের কোন উপায় তোমার নেই”।“রামাদান মাস তোমার দোস্ত! অশ্রু দিয়ে এই মাসকে বিদায় দাও । অন্তরের সমস্ত খারাবী দূরে নিক্ষেপ করো । বড় বেশী কান্নাকাটি করো । এতে সন্দেহ রয়েছে আগামী বছর রামাদান মাস তোমার ভাগ্যে জুটবে কিনা । অনেকের সিয়াম এমন আছে, যারা আর একটি রামাদান মাস পাবে না”। মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রঃ): মহে রামাদানের ফযীলত ও বরকত সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী শাইখ আহম্মদ সরহিন্দী (রঃ) বলেনঃ“এ মাসে সর্বপ্রকার কল্যাণ ও বরকতের সমন্বয় ঘটেছে । গোটা বছর মানুষ যতো বরকত হাসিল করে, তা এ মাসে বরকতের তুলনায় এতোটা তুচ্ছ, যতোটা তুচ্ছ মহাসমুদ্রের তুলনায় এক ফোটা পানি । এ মাসে যে পরিমাণ অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সুস্থতা লাভ করা যায়, গোটা বছরের জন্য তা যথেষ্ট । পক্ষান্তরে এ মাসের অশান্তি ও মানসিক অসুস্থতা গোটা বছরের উপর প্রভাব বিস্তার করে । ঐ সব লোকেরাই সৌভাগ্যবান, এ মাস যাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলো । পক্ষান্তরে ঐসব লোকেরাই ব্যর্থ ও বদনসীব, এ মাস অসন্তুষ্ট হলো যাদের প্রতি এবং যারা বঞ্চিত হলো সর্বপ্রকার কল্যাণ ও বরকত থেকে”। অপর একটি পত্রে হযরত শাইখ বলেনঃ “ এ মাস যদি কোনো ব্যক্তি নেক আমলের তৌফিক লাভ করে, তবে গোটা বছর এ তৌফিক ও সৌভাগ্য তার সঙ্গদান করবে । আর এ মাসটি যদি তার মানসিক অধঃপতন ও আন্তরিকতাহীনভাবে কাটে, তবে গোটা বছরই এভাবে অতিবাহিত হবার আশংকা রয়েছ”। আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রঃ): রামাদান মাসের সিয়াম শোকরিয়া প্রকাশের উপায় সম্পর্কে মওলানা মওদূদী (রঃ) বলেনঃ তাই কুর’আন নাযিল হবার পবত্র মাসে আমাদের সিয়াম পালন শুধু ইবাদতই নয়, কেবল নৈতিক প্রশিক্ষণের নয়; বরং সে সঙ্গে কুর’আনের মতো মহান নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের সঠিক উপায়ও বটে”। সিয়ামের সমাজিক উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেনঃ শহীদ সায়্যিদ কুতুব : মাহে রামদানের সহজ সরল জীবন ব্যস্থাহ সম্পর্কে শহীদ সায়্যিদ কুতুব বলেনঃ দ্বীন-ইসলামের আকীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে সকল বিধান দেয়া হয়েছে সেগুলোর সব কয়টিতেই এই মহান মূলনীতি বিরাজমান । অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্যে সব কিছু সহজ করে দিতে চান, কোনো কঠোরতাই তিনি চান না । একথা স্মরণ রেখে যখন কেউ আল্লাহর হুকুম পালন করে তখন তার মন সজীবতায় ভরে যায়, জীবনের সকল কাজেই সে দেখতে পায় আল্লাহর হুকুম পালন করা কত সহজ ও সুন্দর । প্রত্যেক মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) ব্যক্তি তাঁর হুকুম পালন করতে গিয়ে নিজের মধ্যে এমন সহিষ্ঞুতার ট্রেনিং পায় যে সে কোনো কিছুতেই আর কষ্ট বা জটিলত অনুভব করে না । সিয়াম পালন করার কারণে কষ্ট সহ্য করার যে প্রশিক্ষণ সে পায় তার ফলে আল্লাহর সকল বিধান সকল ফরয কাজ সহ অন্যান্য সমস্ত কাজ পরিপূর্ণ নিপুণতার সাথে আদায় করা তার কাছে এমন সহজ অনুভূত হয় । যেন মনে হয়, পানির শ্রোতের মতো সব কিছু সাবলীল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ধীর গতিতে গাছের বৃদ্ধির মতো নিশ্চিন্ত মনে ও পরিপূর্ণ নিশ্চয়াতা এবং তৃপ্তির সাথে সব কিছু সম্পন্ন হচ্ছে । সাথে সাথৈ তার চেতানান মধ্যে আল্লাহর রহমত এবং মোমেনদের জন্যে তিনি যে সর্বদা সহজ অবস্থা এবং কোনো অবস্থাতেই কঠোরতা চান না একথা সদা সর্বদা জগরুক থাকে । “তার গভীর অনুভূতি সক্রিয় হয়ে ওঠে । আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের মর্য়দা প্রতিষ্ঠিত করে দেন, আর তখন সে স্বতস্ফূর্তভাবে আল্লাহের শ্রেষ্ঠত্বের গান গাইতে থাকে এবং সর্বত্র আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে ।সাথে সাথে নেয়ামত লাভ করায় সিয়াম পালন কারির অন্তর প্রাণ কৃতজ্ঞতাভারে নুয়ে পড়ে । এর ফলে সার্বিকভাবে আল্লাহর আনুগত্য অন্তরের মধ্যে পয়দা হয়ে যায় । সিয়াম আলোচনায় একেবারে শেষে এই কথাটাই বলা হয়েছে, ‘যেন তোমরা আল্লাহর ভযে বাছবিচার করে চলতে পারো’”।
|
|||
Rate This |
||
|
জাযাকাল্লাহ্ খায়ের। সময়োপযোগী ও তথ্যবহুল ধারাবাহিক।
আমার প্রিয় একটি ওয়েবসাইট: www.islam.net.bd
ধন্যবাদ আপনাকে ।