প্রথম ও দ্বিতীয় পোস্ট এখানে : আদব ( জ্ঞান চর্চাকারীর আদবকায়দা )
মূল : শেখ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সাঈদ রাসলিন , সৌদি আরব
- ৩ -
এদের কাছে সেটাই ভাল যা তাদের নিয়ম মেনে চলে ও তাই খারাপ যা এসবের বিরোধী । এসব অভ্যাস ও রীতিকে আদমের সন্তানদের বিভিন্ন দল গ্রহণ করেছে যেমন রাজা , নেতা , বিচারক ,
একদম ছোট থাকতেই একজনকে এসব শেখানো হয় ; বৃদ্ধরা এসব শিখেই বড় হয়েছে - এসব রীতিকে সুন্নাহ হিসাবে পালন করা হয় । বরং যারা এসব পালন করে , তারা এসব অভ্যাসকে সুন্নতের থেকেও বেশী গুরুত্ব দেয় ।
আল্লাহ ও পরকালের পথে দাস যাত্রা শুরু না করা পর্যন্ত এসব বাধা তার কাছে স্পষ্ট হয় না । বাধাগুলি লক্ষ্য করার পরে একজন বুঝতে পারে কিভাবে এসব তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল । আল্লাহর পথে রওনা না হলে একজন ওভাবেই থেকে যাবে , এসব বাধার গোপন প্রভাব বুঝতে পারবে না ।
যে জ্ঞানের চর্চাকারী , তার আকাংখা থাকবে মৃত্যুর পরের জীবন ও আল্লাহর জন্য । সেজন্য এই লক্ষ্যস্থলের জন্য প্রবল একাত্মতা তার মনে থাকতে হবে । এই দুনিয়ার ভোগ –বিলাস ও চাকচিক্য থেকে দূরে থাকার মতো ব্যস্ততার জন্য জ্ঞান চর্চা যথেষ্ট আর বাকী দিন যা আছে তা খুবই অল্প ।
আল আশহাত আবু আর- রাবি বর্ণনা করেন : সুহবাহ তাকে বলেন – তুমি তোমার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলে ও তুমি হয়েছো ধনী ও সফল । আমি হাদীসের সাথে ছিলাম ও হয়েছি গরীব । সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন , সুববাহ বলেছেন : যে হাদীস নিয়ে পড়াশোনা করবে , সে গরীব হবে । আমি এতটাই গরীব হয়ে পড়ি যে আমার মায়ের একটি পট সাত দিনারে বিক্রি করি । আয যুবায়ের বিন আবু বকর বলেন : আমাকে নিয়ে আমার ভাতিজি বলে , আমাদের পরিবারে চাচা তার স্ত্রীর সাথে সবচেয়ে ভাল ব্যবহার করেন । চাচা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেন নি বা দাসী কেনেন নি ।
আমি বললাম : আমার স্ত্রী বলেন , এসব বই থেকে তিন সতীন তার জন্য কম যন্ত্রণাদায়ক হতো ।
সুহবাহের কথা থেকে এই মানে করা ঠিক হবে না যে , বেশী অর্থ রোজগার করতে না পারায় তিনি দু:খ পেতেন । তিনি ছিলেন মহৎ ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী - এতটাই তিনি নির্লোভ ছিলেন যে একবার আল – মাহদী তাকে ত্রিশ হাজার দিরহাম উপহার দিলে সুহহাব সাথেসাথে তা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন । তার কথা থেকে এটাও মনে করা ঠিক হবে না যে , তিনি মানুষকে হাদীস চর্চা থেকে বিরত থাকতে বলতেন । বরং তিনি হাদীস চর্চার পাশাপাশি জীবিকা অর্জনের জন্য ছাত্রদের উৎসাহ দিতেন ।
সুফিয়ান বিন উয়াহনাহ বলেন : এসব কালির পাত্র যে মানুষের ঘরে ঢুকে , তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য জীবন কঠিন হয়ে যায় । আত - তাহহান বলেন : কালির পাত্র বলতে এখানে হাদীসের চর্চাকারীরা যে কালি তাদের সাথে রাখেন যেন যখন যা হাদীস তারা শুনতে পান , তা লিখে রাখতে পারেন সেটা বোঝানো হয়েছে । সুফিয়ান বুঝিয়েছেন হাদীসের ছাত্রদের বেশীরভাগই লেখা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে পরিবারের জন্য আয় করতে পারেন না । ফলে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা অভাবের মধ্যে থাকে । কালির পাত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই এদের এই কঠিন অবস্থা ।
এজন্যই যারা সালাফ তারা পরিবার ও দেশ থেকে দূরে চলে যেতে পছন্দ করতেন । কেননা , যদি একজনের চিন্তা - ভাবনা অনেক কিছুকে ঘিরে হয় , তাহলে সে জ্ঞানকে আবিষ্কার করতে পারবে না - আল্লাহ মানুষের মনে দুইটি অন্তর দেন নি । [ অনুবাদকের ব্যাখ্যা : একটি মন জ্ঞান চর্চা করবে , অন্যটি সংসার চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে , এমনটি সম্ভব না ] ।
অন্যকিছুর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করা মানে তার উপর যারা নির্ভর করে , তাদের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করা বা আয় না করে অন্যের করুণার উপর নির্ভর করা - যারা হয়তো সাহায্য করবে বা করবে না - তা নয় ।
আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন : সেরা দিনার হলো সেটি যা একজন তার পরিবারের জন্য , আল্লাহর পথে পশু ও সাথীদের পিছনে খরচ করে ( বর্ণনায় সাওবান ) । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেন : আল্লাহর পথে তুমি যা খরচ করো যেমন দাস মুক্তি , গরীবকে দান করা ও পরিবারের ভরণপোষণ , এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুরষ্কার পাবে যা তুমি পরিবারের জন্য খরচ করলে ( বর্ণনায় আবু হুরায়রা عنهم رضي الله ) ।
খায়তামাহ বলেন , আমরা একদিন আবদুল্লাহ বিন উমরের সাথে ছিলাম । তার কোষাগারের কর্মচারী সেখানে আসলে তিনি জানতে চান - দাসদের খাবার দিয়েছ ? না উত্তর শুনে তিনি বললেন , যাও , ওদের খেতে দাও । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন : পাপের জন্য এটাই যথেষ্ট যে একজন তার অধীনে যারা আছে তাদেরকে সময়মতো খেতে দেয় নি ( সহীহ মুসলিম )।
এই আলোকে আমরা সালাফদের কথা এভাবে ব্যাখ্যা করবো যে , তারা বেঁচে থাকার জন্য কমপক্ষে যতটুকু দরকার ঠিক সেটাই নিজের ও পরিবারের জন্য চাইতেন । ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে দুনিয়াদারির অনর্থক কাজে তারা ব্যস্ত হতেন না ও সব প্রলোভন থেকে মুক্ত থাকতেন । সালাফরা জ্ঞানকে এতই ভালবাসতেন যে সেটা তাদের দুনিয়ার জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । এ নিয়ে আবু হুরায়রা رضي الله عنهم বলেন , তোমরা বলো আমি রাসূল صلى الله عليه وسلم এর
আমার আনসার ভাইয়েরা তাদের সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আর আমি আস – শুফফার এক গরীব মানুষ সেই হাদীস মুখস্ত করতাম যা তারা ভুলে যেত । রাসুল صلى الله عليه وسلم বলেছিলেন , “ আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে তার কাপড় গুটিয়ে নেবে না , সে তাই মনে রাখতে পারবে যা আমি বলেছি । ” তাই রাসুল صلى الله عليه وسلم এর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি চাদর মেলে বসে থাকতাম । যখন তিনি কথা শেষ করতেন , তখন চাদর গুটিয়ে বুকে ধরতাম । তাই আমি রাসুল صلى الله عليه وسلم এর বলা কথা ভুলি নি ( বর্ণনায় ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম ) । ইমাম বুখারী তার বইয়ের সহীহ জ্ঞান অধ্যায়ে আবু হুরায়রার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন । “ লোকে বলে আবু হুরায়রা খুব বেশী হাদীস বলে । আল্লাহর বইতে যদি এই দুইটি আয়াত না থাকতো , তবে আমি একটি হাদীসও বর্ণনা করতাম না : মানুষের জন্য যা আমি কিতাবে বর্ণনা করি , তারপর যারা আমার নাযিল করা সুস্পষ্ট নিদর্শন ও পরিষ্কার পথনির্দেশ গোপন করে , এরাই হচ্ছে সেই লোক যাদের আল্লাহ অভিশাপ দেন , অভিশাপ দেয় অন্যান্য অভিশাপকারীগণও ।
তবে যারা ফিরে আসবে ও নিজেদের শুধরে নেবে , খোলাখুলিভাবে তারা ( সে সব সত্য ) কথা প্রকাশ করবে ( যা এতদিন আহলে কিতাবরা গোপন করে এসেছিল ) , তারা হবে সেই লোক যাদের উপর আমি দয়া দেখাবো , আমি পরম ক্ষমাকারী , দয়ালু ( সুরা বাকারা ১৫৯ – ১৬০ ) ।
রাসূল صلى الله عليه وسلم একবার আবু হুরায়রাকে বলেছিলেন , তুমি কি আমার কাছে গণীমতের মাল নিয়ে জানতে চাইবে না যা অন্য সাহাবীরা জানতে চেয়েছে ? আবু হুরায়রার জবাব ছিল , আমি আপনার কাছে তাই জানতে চাই যা আল্লাহ আপনাকে জানিয়েছেন ( বর্ণনায় ইবনে কাসির ) ।
সালাফরা সবকিছু থেকে জ্ঞানকে বেশী গূরুত্ব দিতেন । যেমন আল ইমাম আহমদ رضي الله عنهم চল্লিশের পরে বিয়ে করেন । মালিক বিন আনাস رضي الله عنهم বলেন , কেউ জ্ঞানের খোঁজ পাবে না যতক্ষণ না সে অভাবের মুখোমুখি হয় ও জ্ঞানকে সবকিছুর উপর গূরুত্ব দেয় ।
|
|||
Rate This |
||
|
মাশাআল্লাহ্! পোষ্ট করতে পেরেছেন শেষ পর্যন্ত। ভাল লাগলো অনুবাদ বইটি থেকে পোষ্ট পেয়ে।
"নির্মাণ ম্যাগাজিন" ©www.nirmanmagazine.com