২- তিনি হবেন উত্তম চরিত্রের মডেল
শেষ নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ ধরাপৃষ্টে আগমন করেন তখন সমরশক্তি ও অন্যান্য বস্ত্তগত জাগতিক উপকরনে সমৃদ্ধ ছিল রোম এবং পারস্য। কিন্তু তথাপিও ইসলামী বাহিনী, যাদের না ছিল বিপুল সৈন্য সমৃদ্ধ কোন সমর শক্তি, না ছিল যুদ্ধ করে রোম, পারস্যকে পরাস্ত করার মত যুদ্ধাস্ত্র --তাদেরকে পরাভূত করে ফেলে। সকলেই জানে, এটা সম্ভব হয় অভূতপূর্ব এক চরিত্রশক্তির কারনে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, চরিত্রমাহাতব্য এমন এক অস্ত্র যে, বস্ত্তগত উপায়-উপকরন যত সমৃদ্ধই হোক এ জিনিসটির কাছে সবই নিস্ফল।
সুতরাং সংগত কারনেই ইসলাম তার পতাকাবাহীর নিকট এই দাবী করে যে, তারা উত্তম চারিত্রিক অস্ত্রেই নিজেদেরকে আগে সজ্জিত করবে।
দুনিয়ার মানুষ যেন ইসলামী আদর্শের মৌখিক চর্চাই কেবল আমাদের কাছ থেকে শুনতে না পায়, বরং তারা যেন স্বচক্ষে ইসলামী আদর্শের সৌন্দর্য্য ও কল্যাণকারীতা আমাদের জীবনে প্রত্যক্ষ করতে পারে।
রাসুলুল্লা্হর (সাঃ) সাহাবী যায়িদ ইবনুল হারিছার (রাঃ) জীবনের একটি ঘটনাতে শিক্ষণীয় রয়েছে এ পথের লোকদের জন্যে। যায়িদ (রাঃ) আট বছর বয়সে ছিনতাই হয়ে যান। তাকে বিক্রি করে দেয়া হয় ওকাজের মেলায়। মেলা থেকে হাকিম ইবনু হিযাম ইবনু খুয়াইলিদ তাকে কিনে নিয়ে উম্মুল মু’’মীনিন খাদিজা (রাঃ) কে উপঢৌকন দেন। খাদিজা (রাঃ) অতঃপর এ বালককে ক্রীতদাসরুপে উপহার প্রদান করেন রাসুলের (সাঃ) নিকট। আল্লাহর রাসুলের ঘরে এ বালক বড় হতে লাগলেন।
ওদিকে যায়িদের পিতা, মাতা পুত্রশোকে ছিলেন অস্থির। অনেক খোজাখুজির পর তারা খবর পেলেন যে তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান মাক্কায় রাসুলুল্লাহর (সাঃ) বাড়িতে। যায়িদ তখন কৈশোরে পদার্পন করেছেন। যায়িদের পিতা ও চাচা মুক্তিপণ নিয়ে রাসুলের ঘরে এসে হাজির হলেন, বললেনঃ ওহে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! আপনারা আল্লাহর ঘরের প্রতিবেশী, অসহায়ের সাহায্যকারী, ক্ষুধার্তকে অন্নদানকারী ও আশ্রয় প্রার্থীকে আশ্রয় দানকারী। আপনার কাছে আমাদের যে ছেলেটি রয়েছে তার ব্যপারে আমরা এসেছি। আমাদের প্রতি অনুগ্রত করুন এবং ইচ্ছামত তার মুক্তিপণ নির্ধারন করুন।
মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেনঃ মুক্তিপণের চেয়ে উত্তম কিছু যদি আপনাদের জন্যে নির্ধারণ করি তা কি আপনারা চান?
কি তা?
আমি তাকে আপনাদের সামনে ডাকছি। স্বেচছায় সে নির্ধারণ করুক, আমার সাথে থাকবে, না আপনাদের সাথে যাবে। যদি সে আপনাদের সাথে যেতে চায় মুক্তিপণ ছাড়া তাকে নিয়ে যাবেন। আর যদি আমার সাথে থাকতে চায় তাহলে আমি এমন লোক নই যে কেউ আমার কাছে থাকতে চাইবে আর আমি তাকে দুরে ঠেলে দেব।
তারা বললেনঃ আপনি অত্যন্ত ন্যায় বিচারের কথা বলেছেন।
মুহাম্মাদ (সাঃ) যায়িদকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেনঃ এ দু’ব্যক্তি কারা?
যায়িদ বললঃ ইনি আমার পিতা আর উনি চাচা।
মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেনঃ তুমি ইচ্ছা করলে উনাদের সাথে যেতে পার আর যদি আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে তাও পার।
কোনরকম ইতস্ততঃ না করে যায়িদ বললঃ আমি আপনার সাথেই থাকবো।
যায়িদের পিতা বললেনঃ যায়িদ, তোমার সর্বনাশ হোক, পিতা মাতাকে ছেড়ে তুমি দাসতব বেছে নিলে?
যায়িদ বললঃ এ ব্যক্তির চরিত্রে আমি এমন কিছু পেয়েছি যা আমি অন্য কোথাও দেখিনি। তাই তাকে ছেড়ে আমি যেতে পারিনা।
(এটি রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নবুয়াতপুর্ব ঘটনা)
রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ যারা করছেন তাদের জন্যে এক বড়ো গাইড লাইন রয়েছে এতে। অবশ্যই আমাদের নিজেদের চরিত্র এমনতরো হওয়া জরুরী, মানুষকে এ পথে ডাকার পুর্বে।
আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্নিত রয়েছে যে, তিনি সুরা আল-বাকারাহ সাত আট বছর ধরে পড়েছেন। তার নিকট এর ব্যাখ্যা চাওয়া হলে জওয়াব দিয়েছেন, আমি এ সুরা থেকে কতক অংশ পড়ি এবং নিজের জীবনে গ্রহন করি অতঃপর সামনে অগ্রসর হই।
উসামা ইবন যাযেদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সঃ) বলেছেন, কিয়ামাতের দিন এক ব্যক্তিকে এনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তার নাড়ি ভুড়ি বেরিয়ে আসবে। সে এটা নিয়ে এমনভাবে চক্কর দিতে থাকবে যেভাবে গাধা চাক্কির মধ্যে ঘুরে থাকে। জাহন্নামীরা তার চারপাশে সমবেত হয়ে জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক, তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সেই ব্যক্তি নও যে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিত? সে উত্তরে বলবে হ্যা। আমি সৎ কাজের আদেশ দিতাম কিন্তু নিজে তা করতামনা, আমি অন্যদের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম। (বুখারী, মুসলিম)
আল্লাহ বলেন:
হে ইমানদারগন, তোমরা নিজেরা যা করনা তা মানুষকে কেন করতে বল? এটা কিন্তু আল্লাহর নিকট খুবই ক্রোধ উদ্রেককারী ব্যাপার যে, তোমরা মানুষকে নির্দেশ দেবে অথচ নিজেরা করবেনা।’’ (সুরা আস-সফ ২-৩)
-- চলবে --
জাযাকাল্লাহ্ খায়ের।
অসাধারণ ধারাবাহিক।
"নির্মাণ ম্যাগাজিন" ©www.nirmanmagazine.com