অবাধ যৌনাচারের মুলোৎপাটনে ইসলাম একটি অনিন্যসুন্দর বিধান দিয়েছে। মুলত: এ বিধানই হচ্ছে চারিত্রিক অবক্ষয় রোধের প্রধানতম হাতিয়ার। আরবীতে এর নাম نكاح নিকাহ। এ বিধানের মাধ্যমেই একজন নারী অপর একজন পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বৈধ স্বীকৃতি লাভ করে। কুরআন এ ব্যবস্থাকে ‘দুর্গ’ (Fort or a strong and fortified place) নামে আখ্যায়িত করেছে (সুরা আন নিসা ২৫)। অর্থাৎ দুর্গ যেমন এর অভ্যন্তরস্থ বাসিন্দাদেরকে শত্রু থেকে হেফাজত করে বিয়েও ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রী নামক এ জোড়াটিকে শয়তানের যাবতীয় আক্রমণ থেকে বাচিয়ে রাখতে প্রতিরক্ষা বুহ্যের মতো কাজ করে। চোখ যখন পরনারী বা পরপুরুষের চেহারা দর্শন করে তৃপ্তি লাভ করতে চায় তখন বিয়ের দুর্গই তাকে এ কর্মে বাধা দান করে। কান যখন পরপুরুষ বা পরনারীর কন্ঠ শ্রবণ করে সুখানূভুতি পেতে চায় তখন বিয়ের দুর্গই সেখানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায়। যৌনাংগ যখন অবৈধ লালসা মিটাতে আতিপাতি করে তখন বিয়ের বাধনই তাকে কখনো প্রত্যক্ষ আবার কখনোবা পরোক্ষভাবে রক্ষা করে। অধিকন্তু ব্যক্তি ও সমাজকে বিভিন্ন রতিজ ব্যধি ও অনাচার থেকে যে জিনিসটি হেফাজত করে তা হচ্ছে নিকাহ নামক আল্লাহ প্রদত্ত এই Immaculate বিধি। বিবাহ বন্ধনকে দুর্গ বলার আরও একটি বড়ো কারন হচ্ছে এ যে, আইনি এ বিধানের মাধ্যমেই নারী তার স্বীয় সমুদয় অধিকার প্রাপ্তির গ্যারান্টি লাভ করে। বিয়ের মাধ্যমেই একটি পুরুষ অন্য একটি নারীর নিকট পোষাকসম হয়ে উঠে। “তারা (তোমাদের স্ত্রীগন) তোমাদের পোষাক এবং তোমরা (পুরুষরা) হচ্ছো তোমাদের স্ত্রীগনের পোষাক” (সুরা আল বাকারা ১৮৭) অর্থাৎ পোষাক যেমন মানব মানবীর অসুন্দর জিনিসগুলো প্রকাশে বাধা দান করে, যা দেখা দৃষ্টিকটু ও লজ্জাজনক তা ঢেকে রাখে বিয়েও ঠিক তেমনি একজোড়া মানব-মানবীকে যাবতীয় অশালীন ও অপবিত্র বিষয়াদি থেকে হেফাজত করে। পোষাক যেমন দেহের সাথে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্মিলন ও সম্পর্ক তৈরী করে, একজন নারী ও পুরুষের জীবনও ঠিক তেমন যখন তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবন পরিচালনা করতে শুরু করে। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন চরিত্র নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে চায় সে যেন কোনো স্বাধীন মহিলাকে বিয়ে করে” (ইবনু মাজাহ)। এ কথা বলার কারন, বিয়ে না করলে চরিত্র নষ্ট হবার আশংকা প্রবল থাকে। বিয়ের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সুগম হতে পারে - এমন সুখবরও দেয় কুরআন। “যারা নিজেদের যৌন অংগের হেফাজত করে, তারা পুরুয় হোক কি স্ত্রীলোক এবং যারা সদা সবদা আল্লাহকে স্মরণে রাখে, আল্লাহ তাদের জন্য এক বড়ো প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন”। (সুরা আল আহযাব ৩৫)। বিয়েকে বলা হয়েছে শান্তিলাভের বাহন। “তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং অত:পর তার থেকে তিনি তার জুড়ি (সংগী) পয়দা করেছেন, যেন তার কাছে সে পরম শান্তি লাভ করতে পারে....” (সুরা আল আ’রাফ ১৮৯)। বিবাহের জন্য শর্ত ৫টি (বিবাহ জায়েয বা শুদ্ধ হবার জন্য যা জরুরী): ১- পাত্র এবং পাত্রী উভয়ের পক্ষ থেকে অলী তথা অভিভাবক নিযুক্তি। (বর/কনের পিতা জীবিত থাকলে পিতাই হবেন বিয়ের অলী) ২- পাত্র এবং পাত্রী উভয়ের স্বেচ্ছা সম্মতি (কনে যদি লজ্জাবশত চুপ করে থাকে তাহলে মৌনতাকে তার সম্মতি হিসেবে ধরা হবে) ৩- ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা (২জন) ৪- পাত্র এবং পাত্রীর বিয়ের বয়সে উপনীত হওয়া এবং এ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা। ৫- সদ্য বিবাহিত স্বামী/স্ত্রীর একান্তে সাক্ষাত (বাসর) হওয়া। বিবাহের রুকন ৩টি: ১- পাত্র এবং পাত্রী বর্তমান থাকা এবং বিয়ের বয়সে উপনীত হওয়া। ২- ইজাব (যে ব্যক্তি পাত্রীকে বিয়ে দেবার শারীয়তী অধিকার রাখে অর্থাৎ পাত্রীর অলী, একথা বলবে যে, আমি আমার মেয়েকে/বোনকে আপনার নিকট বিবাহ দিলাম। ৩- কবুল (পাত্রের ইচ্ছা ও সম্মতির স্বীকারোক্তি প্রদান। একথা বলা যে, আমি এ বিবাহ কবুল করলাম।) অলী হবার জন্য শর্ত: ১-পুরুষ হতে হবে। ২-অলী স্বাধীনভাবে তার চিন্তা ও মত প্রকাশ করতে পারেন এমন অবস্থা থাকতে হবে। ৩- তাকে বালেগ ও সুস্থ মস্তিস্ক হতে হবে। ৪- একই দ্বীন এর অনুসারী হতে হবে। (কাফির পিতা তার মুসলিম কন্যাকে বিয়ে দিতে পারবেনা। অনুরুপভাবে মুসলিম পিতা তার কাফির কন্যাকে বিয়ে দিতে পারবেনা)। ৫- অলীকে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ হতে হবে। (বিয়ের কাজী যদি জানতে পারেন যে, এ অলী ভাড়া করা লোক। কোনও স্বার্থান্বেষী বা প্রতিহিংসাপরায়ন গোষ্টি তাকে ভাড়া করে এনেছে তাহলে বিয়ে বাতিল করা তার নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব)। স্বাক্ষী হবার জন্য শর্ত: ১-পুরুষ হতে হবে। ২-সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ হতে হবে। ৩-বালেগ ও সুস্থমস্তিস্ক হতে হবে। ৪- বধির বা বোবা হলে চলবেনা (তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি অলীর এ সমস্যার সুরাহা হয় তা হলে বৈধ হবে)। বিবাহের শ্রেণীবিভাগ: ১-সহীহ বিবাহ: বিবাহের সকল শর্তাবলী ও রুকন পুর্ণরুপে পালনপুবক যে বিবাহ অনুষ্ঠত হয় তাকে সহীহ বিবাহ বলে। ২-বাতিল বিবাহ: উপরোল্লিখিত রুকন এবং শর্তাবলীর কোনও একটি যদি অসম্পুর্ণ থাকে বা বাদ যায় তাহলে সে বিবাহ ‘বাতিল বিবাহ’ বলে গণ্য হবে। এছাড়াও, দুই মাহরাম আত্বীয়ের মধ্যে বিবাহ, কোনো নারীর স্বামী বর্তমান থাকাবস্থায় তার বিবাহ, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দত, তাহলিল ইত্যাদি ব্যতিরেকে বিবাহও ‘বাতিল বিবাহ’। কিছু নাসিহাত: কেমন পাত্র নিবাচন করতে হবে: এক ব্যক্তি হাসান আল বাসরীর (রাহিমাহুল্লাহ) নিকট এসে বললো: আমার কন্যার জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে, আমি কার কাছে বিয়ে দেবো? হাসান আল বাসরী বললেন: “যে পাত্রটি সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু তার নিকট বিয়ে দাও। যদি স্ত্রী তার মনের মতো হয় তাহলেতো প্রাণ দিয়ে ভালবাসবে, আর মনমতো না হলেও যুলুম করবেনা”। কেমন পাত্রী নিবাচন করতে হবে: রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “কেবল রুপ দেখে বিবাহ করোনা, কেননা রুপ ধ্বংসের কারন হতে পারে, অর্থ-সম্পদ দেখেও বিয়ে করোনা, কেননা ধন-সম্পদ অহংকার এবং অবাধ্যতার কারন হয়। তাই দ্বীনদারী দেখে বিয়ে কর, কল্যাণ লাভ করবে” (ইবনু মাজাহ)।
|
|||
Rate This |
||
|