নন্দিতার আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আজ থেকে ঠিক একবছর আগে আত্নহত্যা করে সে। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন, টুটুল নামে তারই সহপাঠী এক ছেলের সাথে প্রেম ছিলো নন্দিতার। টুটুল কোটিপতির ছেলে। টাকা পয়সার অভাব ছিলোনা। প্রতি মাসে সে হাত খরচের জন্যই পেতো পঞ্চাশ হাজার টাকা। এতো টাকা সে খরচ করবে কোথায়? সপ্তাহে একবার দিনের বেলায় কয়েক ঘন্টার জন্যে হোটেল ভাড়া করতো সে। সাথে থাকতো স্ত্রী পরিচয়ে নন্দিতা। বাসায় ফিরতে কখনো দেরী হলে নন্দিতা মাকে বলতো: বান্ধবী থেকে নোট নিতে গিয়ে দেরী হয়ে গেছে। এভাবে কেটে গেছে এক বছর। তাদের গোপন প্রেমের খবর কারোর পরিবারই জানতোনা। কিন্তু গাড়ী নিয়ে একদিন এক অনর্থ ঘটলো। টুটুলের বাবা তার বিদেশী পার্টনারদের সাথে মিটিং করতে একদিন সে হোটেলে যান। একি! টুটুলের গাড়ী হোটেলের সামনে কেনো? এটিতো তার কলেজ পার্কিংয়ে থাকার কথা। টুটুলের বাবা পাকা লোক। মুহুর্তেই তিনি বের করে ফেলেন আসল রহস্য। দু’পরিবারেই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। টুটুল তার একরোখা বাবাকে খুব ভয় পেতো। সে ভাল করেই জানতো রেলওয়ের টিটি পরিবারে বিয়ে করাতে কখনোই তার বাবা রাজী হবেননা। চরিত্রহীন টুটুল এবার ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলো। সে বলা শুরু করলো, নন্দিতা নামে কাউকে সে চেনেনা। হোটেলে সে গিয়েছিলো তার এক বন্ধুর নিমন্ত্রণে। নন্দিতার কাছে এ খবর ছিলো মাথায় বাজ পড়ার মতো। কুহেলিকার পানে ছুটে চলা এ যুবতী এবার আর এক কান্ডজ্ঞানহীন কাজ করে বসে। লজ্জা, অপমানে ঐদিনই আত্নহত্যা করে সে। নন্দিতার মা আজ তার নিজের ছোট বোন বাদরিয়াকে ডেকেছেন। উদ্দ্যেশ্য- নন্দিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে সে তার দু:খিনী মেয়ের স্মরণে কিছু কথা বলুক আর দোয়া করে যাক। বাদরিয়াকে এ দায়িত্ব দেয়ার আরও একটা কারন আছে। বাদরিয়া সেই ক্লাস নাইন থেকেই নামাযী। বোরকা ছাড়া সে কদাপি বাইরে যায়না। মাসে একবার সে এ বোনের বাড়ীতে বেড়াতে এসে কুরআনের তাফসীর করতো। নন্দিতার মা মুগ্ধ হতেন কিন্তু তার মেয়ে নন্দিতা ছিলো ব্যতিক্রম, সকলের উল্টো। তার কাছে এসব ভালো লাগতোনা। সে বলতো: এটা কি ধর্ম কর্মের বয়স? জীবনতো পড়েই আছে। চল্লিশ পার হোক, তখন দেখা যাবে। ঘরভর্তি আত্নীয়স্বজন। বাদরিয়া এসব দিবস পালনের বিরোধী। তবুও এসেছে, এ সুযোগে যদি পথভোলা মানুষগুলোকে কিছু কুরআনের কথা শুনানো যায়। নন্দিতার স্মরণে বাদরিয়া কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এই নন্দিতাকে সে কতো বুঝিয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বাদরিয়া নন্দিতার ফেইসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখলো। না, সেখানে প্রশংসনীয় কিছুই নেই। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে কাজ দেবে তেমন কোনো কিছুই সেখানে খুজে পেলনা সে। আছে শুধু বিভিন্ন ঢংয়ের ছবি আর বেহুদা চ্যাটিং। বাদরিয়ার কুরআন হাদিস ভিত্তিক কোনো লেখায়ই নন্দিতা লাইক দেয়নি, শেয়ার করা দুরে থাক। নন্দিতা ভালো মেকআপ করতে পারতো, ফেইসবুকে তার রং বেরং এর ছবিগুলো ভারী আকর্ষণীয় - ইত্যাকার কথা কি কোনো মৃতের জন্য দোয়া করতে গিয়ে বলা যায়???? অগ্যতা অন্য এক প্রসংগ নিয়ে কথা বলা শুরু করলো বাদরিয়া।
|
|||
Rate This |
||
|