বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নথিপত্র ধ্বংস করে ফেলেছে ভারত
নিশ্চিত করেছেন ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল জ্যাকব
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও অমূল্য উপাদান চিরতরে বিনষ্ট করে ফেলা হয়েছে একাত্তরের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের যেসব অফিসিয়াল রেকর্ড ও নথিপত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর কলকাতাস্থিত ‘ইস্টার্ন আর্মি কমান্ড’-এর ফোর্ট উইলিয়ামস্থিত সদর দফতরে মজুদ ছিল, সেগুলোর এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
যেসব ফাইল নষ্ট করে ফেলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মুক্তিবাহিনীর সৃষ্টি ও গড়ে তোলার অনুপুঙ্খ তথ্যাবলি সংবলিত নথিপত্র, বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন মূল্যায়ন, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কমান্ডারের কাছে প্রেরিত যুদ্ধ-সংক্রান্ত নির্দেশাবলি এবং এই অভিযানের সংবেদনশীল অন্যান্য বিবরণ।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক সানডে টাইমস-এ গতকাল এ সম্পর্কে এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বসম্পন্ন পদাধিকারীদের সূত্র সানডে টাইমসকে বলেছে, কলকাতায় অবস্থিত ‘ইস্টার্ন আর্মি কমান্ড’ সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে অভিযান চালানোর নেতৃত্ব দিয়েছিল। আর এর সদর দফতরে যুদ্ধকালীন সময়ের যেসব রেকর্ড রাখা ছিল, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরই তা নষ্ট করে ফেলা হয়। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য এত দিন কোনো চর্চা হয়নি এবং বলতে গেলে তা এক প্রকার গোপনই ছিল।
ইস্টার্ন কমান্ডের কমপক্ষে দু’জন সাবেক প্রধান এবং অন্য শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তারা সানডে টাইমসকে জানিয়েছেন, নথিপত্রের এই ধ্বংস সাধন সম্ভবত ছিল সুচিন্তিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই কর্মকর্তাদের মতে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা যখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন, তখনই এই ধ্বংসকার্য সম্পন্ন হয়। যুদ্ধের পরও বেশ কিছু দিন তিনি এই পদে ছিলেন।
উল্লেখ্য, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা বীরত্বের সাথে এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। তিনিই ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সানডে টাইমস এর বক্তব্য হচ্ছে কী উদ্দেশ্যে ও মানসিকতা নিয়ে ঐতিহাসিক এসব নথপত্রের আক্কেলবিহীন ধ্বংসসাধন প্রক্রিয়া চালানো হয়, তার রহস্য উদঘাটনের জন্য বিশেষ অনুসন্ধানের প্রয়োজন।
এই ফাইলগুলোর চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার স্পর্শকাতর বিবরণ সম্প্রতি জানা গেছে। বাংলাদেশের বর্ষীয়ান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক বিশাল সংর্ধনার আয়োজনের উদ্দেশ্যে ইস্টার্ন আর্মি কমান্ড মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পের বিবরণ সংগ্রহ করতে সচেষ্ট হয়। সানডে টাইমস এ সম্পর্কে লিখেছে, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে থাকার বন্দোবস্ত করেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষকরা তাদের সামরিক তৎপরতা চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানে অভিযান চালায়, মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারাও এই অভিযানের অংশ ছিল। আর এর ফলেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।’ একজন শীর্ষস্থানীয় আর্মি সূত্র সানডে টাইমসকে বলেছে, ‘আমরা মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পগুলোর অবস্থান ও সবিস্তার বিবরণের সন্ধান করছিলাম। আমরা জানতে চাইছিলাম, এই ক্যাম্পগুলো কোথায় কোথায় ছিল? কারা কারা ক্যাম্পগুলোর দায়িত্বে ছিলেন ইত্যাদি। যখন এই ফাইলগুলো খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন ইস্টার্ন আর্মি কমান্ডের পক্ষ থেকে ’৭১-এর যুদ্ধের সব নথিপত্র ও রেকর্ডের খোঁজ শুরু হলো। আর এরপরই আমরা উপলব্ধি করলাম, সব রেকর্ডই হারিয়ে গেছে।’
এ সম্পর্কে যুদ্ধের সময়কার ইস্টার্ন কমান্ডের তৎকালীন ‘চিফ অব স্টাফ’ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) জেএফআর জেকবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বীকার করেন, কলকাতার সদর দফতর থেকে এই ফাইলগুলো হারিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, ‘যখন আমি ইস্টার্ন আর্মি কমান্ডের কমান্ডার হিসেবে ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করি তখনই এই রেকর্ডগুলো দেখতে চাই। আমাকে বলা হয়, এই রেকর্ডগুলো ছিঁড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি করে বিনষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তিনি অবশ্য কার নির্দেশে মহামূল্যবান এই রেকর্ডগুলো বিনষ্ট করা হল তা নিয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেন।
সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় পদাধিকারী সানডে টাইমসকে বলেছেন, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত সেনাবাহিনীর সদর দফতর এবং আরো কিছু ইউনিটের কাছে হয়তো বাংলাদেশ যুদ্ধের কিছু রেকর্ড থাকতে পারে। কিন্তু সম্পূর্ণ চিত্রটি আর কখনোই পাওয়া যাবে না। কারণ, অভিযানের নার্ভ সেন্টারেই (এ ক্ষেত্রে ফোর্ট উইলিয়ামের আর্মি কমান্ড) সামরিক দলিল দস্তাবেজ রাখা হয়। আর এখানে রাখা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি থেকেই সমগ্র চিত্রটি উদ্ধার করা যেত। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের অনুপুঙ্খ বিবরণাবলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তার মতে, এই অভিযান ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা ও সেনাবাহিনীর এক বিরাট সাফল্যের কাহিনী। এই দুই সংগঠনই মুক্তিবাহিনী সৃষ্টি করে এবং তাকে প্রশিক্ষিত করে তোলে, যাতে তারা দক্ষতার সাথে অভিযান চালাতে সক্ষম হয়। আর এর ফলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্রুত আত্মসমর্পণ সম্ভব হয়েছিল। যদিও তারা ছিল সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশি।
যুদ্ধের সময় ইস্টার্ন আর্মি কমান্ডে কর্মরত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিনষ্ট করে দেয়া এই ফাইলগুলোর সংখ্যা হবে কয়েক ডজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ফাইল ছিল প্রচুর, আমাদের কাছে সম্ভবত মুক্তিবাহিনীর প্রতিটি ক্যাম্পেরই তথ্যসংবলিত ফাইল ছিল। অভিযানের জন্য কী ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, যুদ্ধকালীন সময় ও পরিস্থিতির বিভিন্ন মূল্যায়ন ইত্যাদি ওই সব ফাইলে নথিভুক্ত ছিল।’
গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত এই আর্মি কর্মকর্তার পরামর্শ হচ্ছে, কী ধরনের পরিস্থিতির জন্য এই ফাইলগুলো ধ্বংস করা হলো তা জানার উদ্দেশ্যে একটি অনুসন্ধান কমিশন গঠন করা উচিত। এই কমিশন আরো দেখতে পারে, কিভাবে যথাসম্ভব তথ্য পুনরুদ্ধার করা যায়। তিনি আরো বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনো জীবিত রয়েছেন। খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই এ কাজ করা উচিত।
-আহমদ হাসান ইমরান ভারত, সূত্র: নয়াদিগন্ত
ভারতের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা যায় না। তারপরও ভারতপ্রেমী দলটির হুশ হয় না!
http://bangla.irib.ir/
মীরজাফর পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইংরেজদের দালালীই করে গেছে।
এতবড় একটা ঘটনা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য নেই!
ভাল পোষ্ট
www.somewhereinblog.net/blog/lalsalu