সব কিছুর মধ্যে একটা ব্যাপার পুরাপুরি ঠিক ছিল যে জন্য আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর সাথে আমার বিশেষ একটা সম্পর্ক ছিল, খুব ব্যক্তিগত একটা সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকে আল্লাহকে যেমন পারসোনালি কল্পনা করে নিতাম--আল্লাহ শাওয়ার ছাড়ছে, পৃথিবী পর্দায় ঢেকে দিচ্ছে, ফেরেশতা পাঠিয়ে আমাকে নামিয়ে আনছে, অর্থ্যাৎ কিনা আমাকে ঘিরেই আল্লাহর কাজকর্ম (!), এই বোধটা বড় হয়ে বিকশিত হয়েছে! কখনও মনে হয় নি আল্লাহ আমার কথা শুনছে না, পাত্তা দিচ্ছে না। ক্লাস সেভেনে একটা লেখা পড়েছিলাম ছোটদের পত্রিকায়, কানিজ ফাতিমা নিপু নামের একজন লিখেছিলেন, সেটায় আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে সেই হাদীসটা ছিল--আল্লাহ তার সমস্ত রহমতের মাত্র ১% সারা পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিতে ভাগ করে দিয়েছেন, বাকি সব তাঁর নিজের জন্য। হাদীসটা তখনই প্রথম শুনেছি। ওই লেখাটা যে কতবার পড়লাম! এটা পড়ে আমার আল্লাহকে আরও আপন মনে হতো। আজকেই মাত্র নওকে বলছিলাম, আজ অব্দি আল্লাহ আমার কোন প্রার্থনাকে অপূর্ণ রাখেন নি। একটাও না! কত অমান্য করেছি আল্লাহর কথা, মাঝে মাঝে অভিমান করেছি না বুঝেই, কিন্তু যখনই আত্মসমর্পন করেছি, তখনই যত পাগলাটে চাওয়াই হোক না কেন, আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন। সব বৈপরিত্যে, সব মন খারাপের শেষ আশ্রয় হিসেবে আল্লাহকে পেয়েছি, সব সময়। আল্লাহ ছিলেন, কিন্তু আমি আমার বয়সী রোল মডেল হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম। মা ছাড়া বাস্তব রোল মডেল পাই নি। ইসলামকে সত্যিকার অর্থে মানা কোন সমবয়সী মানুষ চিনতাম না তখন! আশে পাশের অনেকেই হয়তো আমার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ছিল, কিন্তু বাহ্যিক ভাবে কাউকে দেখে মনে হতো না সে ইসলাম সম্পর্কে আমার চেয়ে বেশি জানে। ওরকম হলে জানার আর মানার মটিভেশন কমে যায়। আপুদের মধ্যে ভালো কাউকে পেলে হয়তো সেই সময়টা অন্যরকম হতো, কিন্তু একজন আপু আমাকে সরাসরি মুখের উপর বলে দিলেন আমি নিকাব পরি না বলে এটা শরীয়ত সম্মত পর্দা হয় না! বললেন যে মুখ খোলা রাখলে পর্দার মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যায়, এবং আমি বুঝেও না বুঝে থাকতে চাইছি। পর্দা নিয়ে মানুষের মত পার্খক্য থাকতেই পারে। যেখানে আলেমরা এই ব্যাপারে একমত হতে পারে নি, না জানা পাবলিকেরা যাবে কই? কিন্তু মানুষের সাথে ডীল করার সময় মানুষের 'ইন্টিগ্রিটি', মানুষের 'সততা' নিয়ে প্রশ্ন করার মত বড় ভুল আর নেই। বুঝেও না বুঝে থাকতে চাইছি, এই কথাটা শুনে কি যে ভীষণ অভিমান করেছিলাম! তখন আমি সবে তের বছরের মেয়ে, নিজের মত করে বিদ্রোহী, স্রোতের বিপরীতে হাঁটা মেয়ে। স্কুলে ভালো বন্ধুর অভাব নেই, আবার বাইরের বিদ্রোহী খোলসটার ভিতরে সব কিছু থেকে আলাদা হয়ে থাকতে আমার যে কতটা ছিন্ন ভিন্ন বোধ হয় মাঝে মাঝে, সেটাও কাউকে বুঝাতে পারছিলাম না। এর মধ্যে এরকম একটা মন্তব্য! ব্যাস, ইসলামিক 'রোল মডেলের' যেই সামান্য সম্ভবনা ছিলো, সেটা অঙ্কুরেই ধ্বংস হয়ে গেল! তখন আপুর লেখা, সাইমুম, এবং অন্যান্য ইসলামী ঘরনার যেসব লেখা পড়তাম তখন, সেগুলো পড়ে নিজের ভিতর 'ইসলামী চেতনা' ঢুকেছে, 'ইসলাম নিয়ে অহংকার' ঢুকেছে, নিজের মত করে ইসলামের প্রতি লয়ালিটি বেড়েছে, ভালোবাসা বেড়েছে, মুসলিম উম্মাহকে এক শরীর হিসেবে ভাবতে শিখেছি, অর্থ্যাৎ ইসলাম নিয়ে যত রকম আবেগ আর অনুভূতি আছে, সব বেড়েছে উত্তরোত্তর, আবার সমরেশের বিপ্লবী বইগুলো পড়ে টড়ে, সমাজ বদলানোর স্বপ্ন টপ্ন সব ইসলামী চেতনায় অনুবাদও করে নিতে শিখেছিলাম, কিন্তু এগুলোর সাথে সাথে জ্ঞান আর বিশ্বাসের গভীরতাও যে বেড়েছিল, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। অথচ যত বড় হচ্ছি তত বুঝছি, জ্ঞান-বিশ্বাসের গভীরতা আর আবেগ অনুভূতির তীব্রতায় কত আকাশ পাতাল তফাৎ।
|
|||
Rate This |
||
|
"আল্লাহর শাওয়ার ছাড়া" মানে কি বৃষ্টি?
পর্দার ক্ষেত্রে নিকাবের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে সত্য, কিন্তু পর্দায় নিকাবের ভূমিকা ঠিক যেমন সুগন্ধির শিশিতে আঁটা ছিপির মতই। ছিপি সরিয়ে দিলে সুগন্ধি ছড়াতে থাকবে, চারপাশকে আকর্ষণ করতে থাকবে, তাতে করে নানা ধরনের মানুষ আকর্ষিত হতে থাকবে এবং একটা সময় সুগন্ধের তীব্রতা কমতে কমতে আকর্ষণ ফুরিয়েও যাবে।
লেখার পর উদারহণটা যথার্থ হলো কিনা ভাবছি। ভুল হলে কিংবা নিরর্থক কিছু হলে মার্জনীয় হবে আশা করছি।
"নির্মাণ ম্যাগাজিন" ©www.nirmanmagazine.com
নিকাব নিয়ে বিতর্কটা তো আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা নিয়ে তাই না? এবং এ ক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন তাঁরা ব্যবহার করেছেন কুরআন এবং হাদিস নিজেদের দলিল হিসেবে। যখন এর সাথে পরিবেশ-পরিবার-সমাজ-প্রভাবিত-নিজস্ব-মতামত এসে যুক্ত হয় তখন তা কিন্তু আর আল্লাহ দেওয়া সীমারেখা থাকে না। এটি হয়ে যায় নিজের সীমারেখা।
হ্যা, আল্লাহর শাওয়ার মানে বৃষ্টি
আমি ইমরান ভাইয়ের মতের সাথে পুরাপুরি একমত। প্রতিদিন পাঁচবার নামায পড়লে শরীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকে এই যুক্তিতে কেউ যদি নামায পড়ে, তাহলে সেটা অর্থহীন, আল্লাহর কাছে অগ্রহনযোগ্য। আকর্ষন আর সুগন্ধীর ঢাকনি এঁটে বন্ধ করে রাখার জন্য কেউ যদি নিকাব পরে, তাহলে সেটা আল্লাহর কাছে কি গ্রহনযোগ্য হবে? নাকি সে জন্য কেউ নবীর যুগে নিকাব পরেছিল?
উপমাকে দলিল হিসেবে নিলে কিভাবে হবে?
তাছাড়া পক্ষ মূলত: দু'টো। তা কুরআন-হাদীসের দলিল দিয়ে হোক কিংবা উপমা-উদাহরণের দ্বারা হোক। তবে অবশ্যই আল্লাহর সীমারেখা নির্ধারিত হবে কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের ভিত্তিতে; উপমা-উদাহরণে নয়। এবং অবশ্যই কেউ উপমা-উদাহরণের মাধ্যমে কোনদিন, কোথাও আল্লাহর সীমানা নির্ধারণ করবে না।
বিষয়টা নিয়ে পশ্চিমে থাকা ভাইদের মুখে যা শুনেছি, তাতে মর্মাহতই হলাম। বিষয়টি নিয়ে কিছু পড়াশোনা করার ইচ্ছে হচ্ছে খুব।
সন্ধ্যাবাতি, আপনার এ ধারাবাহিকটা দীর্ঘ করবেন আশা করছি। শেষ করবেন বলবো না, কারণ আপনি যতদিন আছেন এ ধারাবাহিকতা থাকার কথা
www.fazleelahi.com
ফজল ভাই,


মানুষ দলিল দেখানোর আগেই যে উপমা দেয়! আমার মনে আছে কি উদ্ভট সব কারণ দেখাচ্ছিল, মেয়েদের সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দুই হচ্ছে মুখ... আমি বলছিলাম, কিন্তু আমি তো জানি আমি সুন্দর না! আমার মুখ ঢেকে রাখলে তো আমি আরও অসুন্দরটাকেই ঢেকে রাখব! মানুষের সব সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু তাদের চোখ, তখন তো উল্টা মানুষ আমাকে দেখে পাগল হয়ে যাবে!
এই সব যুক্তি আগে দিলে প্রথমেই হেরে যেতে হবে, কারণ ইউসুফ (আ) এত সুন্দর ছিলেন, যে মেয়েরা তাকে দেখতে গেলে হাত কেটে ফেলত। আল্লাহ যদি সৌন্দর্য ঢেকে রাখার জন্য নিকাব পরতে বলতেন, তাহলে ইউসুফ (আ) কে হিজাব পরতে হতো।
দলিল দেখানোর আগেই উপমা দিয়ে যখন তের বছরের মেয়েটার কাছে হেরে গিয়েছিলেন আপুটা, তখন বলা শুরু করলেন আমি বুঝেও বুঝতে চাইছি না, কথা প্যাঁচাচ্ছি!
অথচ, প্রথমে যদি আমার কাছে ব্যাপারটা এভাবে আসত যে এটা আল্লাহর নির্দেশ, তাহলে কিন্তু আমার মাথায় এত প্রতিযুক্তি আসত না! কারণ আল্লাহর নির্দেশ কথাটার কোন প্রতিযুক্তি হয় না।