'আতাউর রহমান সিকদার' -এর ব্লগ
১৩) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
|
|||
১০) মানুষ নাবী হবার দাবী করে কোনও স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। নেতৃত্ব, ধন-সম্পদ অর্জন, প্রতিহিংসা, সত্য নাবীকে টেক্কা দিয়ে আপন স্বার্থ উদ্ধার ইত্যাদি মিথ্যা নবুয়াতের দাবীদারদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে থাকে। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনেতিহাস ভিন্ন কথা বলে। পচিশ বছর বয়সে তিনি মাক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী মহিলাকে (খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা) বিয়ে করেন। তিনি চাইলে এ স্ত্রীর অর্থ সম্পদ ব্যবসায়ে খাটিয়ে আরবের ধনকুবের হতে পারতেন এবং এর সাথে নবুয়াতের তকমা যোগ করে হতে পারতেন পুরোহিতসম্রাট। তার সামনে অবারিত ছিলো বসত বাটি সমৃদ্ধ বিমুগ্ধ দুনিয়া। কিন্তু তাকে সে বিমুগ্ধ দুনিয়ার ধারে কাছেও ঘেষতে দেখা যায়নি।
|
|||
৬) কুরআনের সংখ্যাতাত্বিক ও গাণিতিক বন্ধনের রহস্যটি একটি আশ্চযজনক বিষয়। এতে রয়েছে উনিশ সংখ্যার এক অদ্ভুত মিল। আপনি যদি এ মিল রেখে কুরআন রচনা করতে যান, তাহলে আপনাকে ৬০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ বার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অর্থাৎ কুরআন শুরু থেকে শেষ পযন্ত এতবার আপনাকে পড়তে হবে শুধুমাত্র এর গাণিতিক বন্ধনে মিল রাখার জন্য এ বং এ চেষ্ঠার পর কেবলমাত্র একবারই আপনি সফলকাম হবেন। সুতরাং একাজ সম্পন্ন করতে আপনাকে কতো বছর আয়ু পেতে হবে তা সহজেই অনুমেয়। ৭) মানুষের আকল বা বিবেক বুদ্ধির বিরুদ্ধে যায়, কুরআনে এমন কোনো কথা বা নির্দেশনা নেই। যেমন উদাহরণস্বরুপ, কুরআন কারিমে বলা হচ্ছে – একজনের পাপের বোঝা অন্যজন বহন করবেনা। একজনের পাপের কারনে অন্যজনকে শাস্তি দেয়া হবেনা।
|
|||
আপনি যদি একটি যুক্তি নিরপেক্ষ মন নিয়ে আল কুরআনুল কারিম অধ্যয়ন করেন তাহলে এটি স্বীকার করবেন যে, কোনো মানুষের পক্ষে এধরনের গ্রন্থ রচনা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়, তারই কিছু arguments নীচে তুলে ধরা হচ্ছে: ১)মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখতে পড়তে জানতেননা। যদি তিনি লেখাপড়া জেনে থাকতেন, লোকেরা তাকে বই পড়তে, অধ্যয়ন ও গবেষণা করতে দেখতো তাহলে অবশ্যই অবিশ্বাসীদের জন্য এধরনের সন্দেহ পোষণ করার কোন ভিত্তি থাকতো যে, এসব জ্ঞান অহীর মাধ্যমে নয় বরং জাগতিক মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। (সুরা আল আনকাবুত ৪৮) ২) কুরআনের মতো এমন একটি গ্রন্থ রচনার জন্য শুধুমাত্র লিখাপড়া নয়, এর লেখককে একই সাথে কাব্যিক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবেত্তা, জোতিবিদ, আইনবিদ ও চিকিৎসাবিদ হওয়া জরুরী। কারন, এপযন্ত যারাই কুরআনের মতো কিছু একটা লিখার প্রয়াস চালিয়েছেন তারা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, আরবী ভাষার সমস্ত সৃষ্টিশীলতা, মেধা ও কাব্যজ্ঞান ব্যবহার করেও কুরআনের অনুরুপ কিছু রচনা করা যায়না।
|
|||
নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্বও একটি পরীক্ষা, শুধু অভাব অনটন বা বিপদ মুসিবাত নয়। (দ্রষ্টব্য: সুরা আল আম্বীয়া ৩৫)। কিয়ামাতের দিন অধিকাংশ মানুষ এ নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বহেতু জাহান্নামী হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “দুনিয়াতে দশজনেরও নেতা ছিল, এমন ব্যক্তিকে কিয়ামাত দিবসে এরুপ অবস্থায় উত্থিত করা হবে যে, তার দু’হাত তার গলার সাথে বাধা থাকবে। তখন তার ন্যায়নীতি ও নেক কাজ হয় তাকে মুক্ত করবে নতুবা তার অন্যায় অবিচার তাকে জাহান্নামে প্রেরণ করবে”। (মুসনাদ আহমাদ, ইবন হিব্বান)। অন্য এক হাদিসে এসেছে: “কিয়ামাতের দিন আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় এবং নৈকট্যের অধিকারী হবেন আল্লাহভীরু ন্যায়পরায়ণ শাসক, নেতা এবং বিচারকগন। আর সবচেয়ে ভয়াবহ আযাবের সম্মুখীন হবে যালেম শাসক, নেতা ও বিচারকগন। (মুসলিম, তিরমিযি। বর্ণনাকারী: আবু সাঈদ আল খুদরী রা:)।
|
|||
একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক শস্য দ্রব্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি শস্য স্তূপে হাত ঢুকিয়ে দেখলেন যে, উপরিভাগে শুকনোগুলো দেখা গেলেও নীচের দিকে রয়েছে ভেজা। তিনি বললেন, ‘ওহে দোকানের মালিক! এটি কি? জওয়াবে দোকানী বলল, হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টির কারণে এরূপ হয়েছে। এ কথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তুমি ভেজাগুলো ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে ক্রেতাগণ এর অবস্থা দেখতে পেত (প্রতারিত হতো না)। যে ধোকা দেয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না। (বুখারী ৩০৯/৪, মুসলিম ১৫১৫, তিরমিযি ১৩০৪, আবু দাউদ ৩৪৩৮ মুল আরবী। বর্ণনাকারী: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু) নোট: বৃষ্টি ভেজা শস্য/খেজুর কোন ক্ষতিকারক জিনিস নয়। কিন্তু তথাপি এ অবস্থা দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন যে, “যে মানুষকে ধোকা দেয় সে আমার উম্মাতের দলভুক্ত নয়”। এ যুগের ফরমালিন, কারবাইড, টেষ্টিং সল্ট, সোডিয়াম সাইক্লামেট (যা মানুষকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে তিলে তিলে মারে) ইত্যাদি দেখে রাসুল সা: কি বলতেন????
|
|||
মাতা পিতা সন্তানের জন্যে যে ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেন কোন সন্তানের সাধ্য নেই তার বিনিময় আদায় করে। তারা সন্তানের সুখের জন্যে নিজের সুখ ও আরাম আয়েশকে বিসর্জন দেন। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। সন্তান জেগে থাকলে তারাও জেগে রাত কাটান। সন্তান বড় হলে তাদের শিক্ষা দীক্ষার জন্যে কত কিছু না করেন, জীবনকালে তারা সন্তানের জন্য আয় করেন এবং মরনের পরেও তাদের জন্য সঞ্চয় করে রেখে যান। আরো কত কি! যার শুমার করা ভার। একারনে আল্লাহ তায়ালা তিনি তার নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশনার সাথে সাথে আদেশ করছেন মানব সন্তানগন যেনো তাদের মাতা পিতার প্রতিও কৃতজ্ঞ হয়। “আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অত:পর কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করো তোমার মাতাপিতার প্রতি . . (সুরা লুকমান ১৪) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একারনেই বলতেন: কুরআনের তিনটি আয়াত তিনটি জিনিসের সাথে সম্পৃক্ত করে নাযিল হয়েছে। প্রতি জোড়ার একটি বাদ দিয়ে অন্যটি করা হলে তা কবুল হবেনা।
|
|||
“তারা কি মাথার উপর উড়ন্ত পাখীগুলোকে ডানা মেলতে ও গুটিয়ে নিতে দেখেনা? রহমান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি তাদেরকে ধরে রাখেন, তিনিই সকল কিছুর রক্ষক” (সুরা আল মুলক ১৯) টীকা: অর্থাৎ বাতাসের বুকে ভর করে পাখীদের উড়া – এটি মহান আল্লাহর হিফাজত ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারনে। আল্লাহ তায়ালাই বাতাসকে (Atmosphere) এমন নিয়ম ও ব্যবস্থার অধীন করে দিয়েছেন যে, বাতাসের চেয়ে ভারী বস্তুও এখানে ডানা মেলে উড়তে পারে। এ সুরারই ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “তিনিই তো সেই মহান সত্তা যিনি ভু-পৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। তোমরা এর বুকে চলাফেরা কর এবং তার দেয়া রিযিক খাও...”। অর্থাৎ পৃথিবী নামক এ গ্রহটি আপনা আপনি তোমাদের জন্য তৈরী হয়ে যায়নি। তোমাদের জ্ঞান ও বিবেকের দুয়ারে যদি তালা লেগে না থাকে তাহলে দেখতে পাবে – এ পৃথিবীকে তোমাদের জীবন ধারণের উপযোগী বানাতে, এখানে তোমাদের জন্য রিযিকের অফুরন্ত ভান্ডার তৈরী করতে কেমন জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কুদরাহর প্রয়োজন হয়েছে।
|
|||
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, একবার আমাদের সামনে দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হলো , লোকেরা মৃত ব্যক্তিটির প্রশংসা করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ওয়াজিব হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর আরেকটি লাশ এল। লোকেরা তার দুর্ণাম করলো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ওয়াজিব হয়ে গেছে। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসুল, কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? রাসুল সা: বললেন: যে মৃতের তোমরা প্রশংসা করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার তোমরা দুর্ণাম গাইলে তাতে তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তোমরা হচ্ছো দুনিয়াতে আল্লাহর সাক্ষী। (হাদিস নং বুখারী ১৮১/৪, মুসলিম ৯৪৯। মুল আরবী) টীকা: এখানে ঐ প্রশংসার কথা বলা হয়েছে যা স্বতস্ফুর্তভাবে সাধারণ মানুষ অন্তর থেকে করে থাকে। ঐ প্রশংসা বা জানাযা নয়, যা কর্তৃত্বশীলদের চাপ, রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা বা সামাজিক স্ট্যাটাস কিংবা পার্থিব স্বার্থের জন্য করা হয়। আর, এটাতো জানা কথা যে, একজন পাপী বা যালিম ব্যক্তির জন্য মানুষ কখনোই অন্তর থেকে প্রশংসা বা দোয়া করেনা।
|
|||
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একে অপরের প্রতি ভালবাসা ও মমত্ববোধ, দয়া, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে মুমিনরা হচ্ছে একটি দেহের মতো। যার কোন একটি অংগ পীড়িত হয়ে পড়লে তার সমস্ত অংগ জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে”। (বুখারী ৩৬৭/১০ মুসলিম ২৫৮৬। বর্ণনাকারী: নুমান ইবনু বাশির রা:) টীকা: রাসুলুল্লাহর (সা) আসহাবগন, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগন ছিলেন এ হাদিসের বাস্তব নমুনা। মুহাজিরদের জন্য মাদিনার আনসারদের ভ্রাতৃত্ব ও ত্যাগের ইতিহাস, ইয়ারমুকের যুদ্ধের ঘটনা কোনো বানানো কাহিনী নয়। বলাবাহুল্য, মুমিনদের এ বৈশিষ্টের কারনেই ইসলাম তখন এক বিশ্বজয়ী সভ্যতা ও শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ফিকহী মাসআলায় মতের অনৈক্য থাকলেও তারা সকলে ছিলেন এক প্রাণ, এক দেহের মতো। অথচ বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র। এখানে ঐক্য ও সহমর্মিতার বদলে কিভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্ধেষ আর কুফরীর ফাতওয়া দিতে হয় তার প্রাকটিস চলে (অবশ্য সবাই এরকম নয়)। আর, এসব দেখে একজন ইংরেজী শিক্ষিত লোক ভাবেন – এই যদি হয় ইসলাম, তাহলেতো কম্যুনিজম এর চেয়ে ঢের ভালো।
|
|||
