যে কোন পিতা-মাতার বিবাহ যোগ্য মেয়েটির যখন বিয়ে হয়ে যায় , তখন সেই মেয়েটি প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসে তখন তার মা খুব আগ্রহ ভরে জানতে চায় যে ঐ বাড়িতে তার কেমন লেগেছে ?
তখন প্রায় মেয়ে বলেঃ ভালো। তবে মানুষগুলো কেমন যেন। পরিবেশটাও কেমন কেমন । আমার ভাল লাগে না ।
মেয়ের ভেতর একধরনের হতাশা দেখতে পায় তার মা। তখন মায়েদের মনটা খারাপ হয়ে যায় । তারপরও মায়েরা নিজেদের মনের হতাশ ভাবটা লুকিয়ে রেখে বলেঃ একটু ধৈর্য ধর তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে ।
( এখন যা লেখব তা এরকম একটি নববধুকে তার মায়ের দেওয়া শিক্ষনীয় ঘটনা। )
এক নব বিবাহীতা মেয়ে প্রথম শ্বশুর বাড়ি থেকে তার বাপের বাড়িতে আসে । তখন তার মা খুব আগ্রহ ভরে জানতে চায় যে ঐ বাড়িতে তার কেমন লেগেছে ?
তখন মেয়ে বলেঃ ভালো। তবে মানুষগুলো কেমন যেন। পরিবেশটাও কেমন কেমন । আমার ভাল লাগে না ।
মেয়ের ভেতর একধরনের হতাশা দেখতে পায় তার মা।
ঐ মা মেয়েকে আর কিছু বলল না । মেয়ে মনের আনন্দে বাপের বাড়ি বেড়াতে লাগল । বিয়ের পর মেয়েটি এখানে এসে দেখতে পেল অন্যরকম এক ভালবাসা । যা আগে কখনও পায়নি । সবাই ওকে খুব স্নেহ করে ভালবাসে । ও যখন যা চাইছে তাই হাজির হয়ে যাছ্ছে । সে যেন তার চির চেনা বাবার বাড়িতে মহামান্য অতিথি । সবার স্নেহ আর ভালোবাসা ওর জন্য উপচে পড়ছে । এই সময় শ্বশুর বাড়ির কথা মনে হলে মনটা আনমনে ভারাক্রান্ত হয়ে যায় । এখানে ( বাপের বাড়ি ) কত চেনা মধুর পরিবেশ আর ওখানে ( শ্বশুর বাড়ি ) সবাই অচেনা সবাই কতৃত্ব পরায়ন। দু একজন আছে খুবই স্নেহশীল । তারপরও কেমন যেন পর পর ।
দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। মেয়ের চলে যাবার সময় চলে আসে। চলে যাবার ঠিক আগের দিন মা তার মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করেন। মা চুলায় আগুন জ্বালিয়ে পানি ভর্তি একটা হাড়ি তুলে দেন এবং তা গরম করতে থাকেন। একসময় যখন হাড়ির পানি ফুটতে শুরু করল, তখন মা হাড়িতে গাজর, ডিম আর কফির বিন দেন। এভাবে প্রায় পনের বিশ মিনিট জ্বাল দেন । তারপর মা আগুন নিভিয়ে চুলা থেকে হাড়িটা নামান। এরপর হাড়িতে জ্বাল দিয়ে সিদ্ধ করা গাজর, ডিম এবং কফির বিন ঢেলে একটি বাটিতে রাখেন।
এবার তিনি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন
ঃতুমি এখান থেকে কি বুঝতে পারলে আমাকে বল” ?
মেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে-
ঃআমি দেখলাম তুমি গাজর, ডিম আর কফির বিন সিদ্ধ করে একটা বাটিতে নিয়েছ।
মেয়ের কথা শুনে মা বললেন-
ঃহ্যাঁ, তুমি ঠিকই দেখেছ। তবে এতে তোমার জন্য একটা উপদেশ আছে । যা বোঝানোর জন্য আমি এগুলো নিয়েছি। “ আমি তোমাকে এখন যে কথাগুলি বলব, আমার মাও ঠিক এইভাবেই আমাকে এ কথাগুলি বলেছিল। আমি জানিনা কথাগুলি তোমার কতটুকু উপকারে আসবে, তবে আমার জীবনকে অনেক প্রভাবিত করেছিল”।
এবার আমার কথা গুলো খুব খেয়াল করে শুন। কেননা এই উপদেশই হয়ত তোমার নতুন জীবনের পথ চলাতে পাথেয় হবে । আর এই পাথেয় তোমাকে করবে স্বনির্ভর ,আত্মবিশ্বাসী।
বাটিটার দিকে দেখ এখানে রাখা জিনিসগুলো তাদের পূর্বের স্বকিয়তা হারিয়ে অন্য রকম হয়ে গেছে। সিদ্ধ করার আগে গাজর ছিল মোটামুটি শক্ত ধরনের, ডিম ছিল খুব হালকা যার ভিতরটা তরল , আর কফির বিন ছিল খুবই শক্ত। কিন্তু যখন এগুলিকে সিদ্ধ করা হল তখন তিনটি জিনিসের তিন রকম হয়ে গেল। গাজর খুব নরম হয়ে গেল, আর ডিমের তরল অংশটা শক্ত হয়ে গেল আর কফির বিন পানিতে মিশে সুন্দর ঘ্রান আর মিষ্টি স্বাদে পরিনত হল।
মা কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে বলতে লাগলেন-
“তুমি যদি তোমার স্বামীর বাড়িতে নিজেকে কঠিনভাবে অর্থাৎ কাচা গাজরের মত উপস্থাপন কর, তবে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তোমার সংঘর্ষ হবে তখন তোমার কাঠিন্যর কারনে সবাই তোমাকে মানসিক ও কেউ কেউ শাররিক ভাবে আক্রমন করে তোমাকে দুর্বল করে ঠিক সিদ্ধ গাজরের মতই নরম করে ফেলবে। এতে তোমার ব্যক্তিত্ব হারিয়ে যাবে ।
যদি তুমি নিজেকে নরম-ভঙ্গুর করে উপস্থাপন কর অর্থাৎ কাচা ডিমের মত। তবে সবাই অসহায় ও দুর্বল ভেবে তোমাকে কব্জা করে ফেলবে , এরপর আঘাতের পর আঘাত করে তোমার হৃদয়কে একসময় কঠিন করে ফেলবে ঠিক ডিমের মত।
কিন্তু তুমি যদি তোমার ভালবাসা দিয়ে নিজেকে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মিশিয়ে দিয়ে তার অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পার তবে পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে ঠিক যেমন কফির বিন গরম পানির সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে পানিকে সুস্বাদু আর চারপাশকে মিষ্টি ঘ্রানে ভরিয়ে দিয়েছে ।
এভাবে যদি তুমি নিজেকে শ্বশুর বাড়িতে মিশাতে পার তাহলে এই বাপের বাড়ির চেয়ে তোমার শ্বশুর বাড়িকে বেশি আপন মনে হবে। ওখানে সবার স্নেহ ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় তুমি হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি বিবাহীত নারী ।
মেয়েদেরকে গাজর, ঘাস লতাপাতা বহু কিছুর সাথেই তুলনা করা হয়, এই ট্রেন্ড আমি পছন্দ করি না।
আরও একটা জিনিষ বুঝিনা, কেন ধরে নেয়া হয় মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকবে। তাদের আলাদা বাসা পাওয়াটা অধিকার। শ্বশুর বাড়ির মানুষের সাথে ভালো ব্যাবহার করা ছাড়া আর সেরকম কোন শরঈ দায়িত্ব আছে বলে আমার জানা নেই। জানা ভুল হলে জানাবেন।
মেয়েদেরকে গাজর, ঘাস লতাপাতা বহু কিছুর সাথেই তুলনা করা হয়, এই ট্রেন্ড আমি পছন্দ করি না।@ আরবী লোগাতের 'আছার' বোঝেন তো? আছার হলো উপমা। গল্পটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। সুন্দর তিনটি উপমা দ্বারা একটি মেয়ের ভবিষ্যত জীবন যেন সুন্দর হয় সেই উপদেশ দিচ্ছেন একজন মা। এর মাঝে আপনিও নারীবাদীদের কথিত সেই 'অমুক ট্রেন্ড' পেলেন কীভাবে বুঝলাম না। নারীবাদী মনোভাব কেবল নারী-পুরুষ দ্বন্দের সস্তা বিতর্কই আনতে পারে, আল্লাহর বিধানকে ওভারটেক করলে "তাদের" ফলশ্রুতি "ধর্ষণ/গণধর্ষণ" হবে।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত 'আদাবুল মুআশাররাত' পড়ে দেখবেন পিতা মাতার খেদমত করা পুত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এখন নারীবাদী যুক্তিতে 'আধুনিকা বউ' নিয়ে এপার্ট হয়ে এপারর্টমেন্টে থাকলে পিতা মাতার খেদমত হবে কীভাবে?
আপনার কথার দলিল প্রমান দেখান।
পিতামাতার খেদমত করার দায়িত্ব সন্তানের সেটির সাথে দ্বিমত নেই।
সন্তানের দায়িত্ব আপনি বউয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছেন কেন?
বউ তাহলে কি ভীনগ্রহের প্রাণী? সে কি সমাজ থেকে আলাদা? স্বামীর মা-বাপ কি বউয়ের শত্রু আর বউয়ের মা-বাপ স্বামীর পরম আপন এই টাইপ আধুনিকা ফিলোসফি? আপনি কোন মার্কস বুঝে আসছে না।
নব বিবাহিতা একটা মেয়েকে কেন আলাদা করছেন?
আর আমিতো সেই দায়িত্বের বিরাট বোঝা বউয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেই নি। কই বলিনি তো! স্ত্রীদের শরঈ দায়িত্ব সম্পর্কে আমারো পড়াশোনা নেই, সেটা জানতে হবে। 'আলাদা'বাদের দাবী তুলছেন কেন? প্রকৃত মুসলিমদের পরিবার আর স্টার জলসা নাটকের পরিবারের মাঝে তো একটা আদর্শগত পার্থক্য আছে নাকি? বউ-শাশুড়ি ট্রাজেডি তো মুসলিম পরিবারে থাকার কথা নয় বরং আমার অল্প-সামান্য জানাশোনামতে তা হয় মধুর সম্পর্ক। একেবারে মধু না হলেও অন্তত এটি একটি স্নেহের সম্পর্ক। কি বলেন?
আমি মেয়েদের দায়িত্বের নুন্যতম সীমার কথাটি তুলছি এ কারণে যে আপনি কখনো এরকম ইশপের উপদেশমালা দেখবেন না, যেখানে ছেলের বাবার বাড়ির সবাইকে উপদেশ দেয়া হয়েছে একটি মেয়ে নতুন এ বাড়ীতে এসেছে, যে বাড়ির পরিবেশ তার সম্পূর্ণ অপরিচিত, তাকে কিভাবে আপন করে নিতে হবে।
উপমহাদেশের কন্টেক্সটে দেখলে আমার কথাকে আলাদা'বাদ মনে হতেই পারে। কিন্তু ইসলাম উপমহাদেশের ট্র্যাডিশনের উপর নির্ভরশীল না।
মেয়েরা তার দায়িত্বের বাইরে শুধু রান্নার কাজটি নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে যে ইহসানটি ফ্যামিলির প্রতি প্রতিনিয়ত করেন, সেটি যদি তাঁরা বন্ধ করে দেন, তাহলে এইসব বউয়ের মানিয়ে নেয়া সংক্রান্ত কচকচানি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
সবশেষে, ছোট্ট একটা প্রশ্নঃ ছেলের ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই পিতামাতার এবং স্বামী/স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব/কর্তব্য নিয়ে অসংখ্য আয়াত/হাদীস আছে। শ্বশুর শাশুড়ীর প্রতি দায়িত্ব/কর্তব্য সংক্রান্ত আয়াত/হাদীসের কিছু খোঁজ দিতে পারেন?
ভাবছি এ ব্যাপারে স্থানীয় কোন আলেমের কাছে জিজ্ঞাসা করবো। সমস্যা হলো উনারা মাহফিলে মাহফিলে ওয়াজ ফরমাইতে খুব ব্যস্ত থাকেন। একেতো যুবক ছেলের কাছে এসব প্রশ্ন শুনে ইঁচড়ে পাকা ভাবে এবং 'কটমট' আচরন করে। তার উপর বিদআতে আসক্ত।
আস্সালামু আলাইকুম । আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ। আশা করি অন্যান্য মন্তব্য থেকে আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন ।
sikder
যৌথ সংসারের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুই দিকই আছে । বিয়ের পরপরই যদি একজন মেয়ে তার স্বামীকে নিয়ে দূরে আলাদা বাসায় চলে যায় , তাহলে শ্বশুর - শাশুড়ি আর অন্যদের সাথে স্নেহ - প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠার অবকাশ থাকে না । বিশেষ করে একমাত্র ছেলের মাতাপিতার জন্য এটা এখন আতংকের বিষয় যে ' বৃদ্ধবেলার লাঠি ' পর হয়ে যাবে ।
কেউ একসাথে থাকতে না চাইলে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বা কাছাকাছি বাসায় থাকতে পারে যেন বৃদ্ধ পিতামাতার যে কোন দরকারে পাশে থাকা যায় । আজকাল সামান্য কারনে শ্বশুর শাশুড়ির সাথে ঝগড়া - বেয়াদবি করে আলাদা বাসায় চলে যাওয়া আধুনিকা নারীদের একটি ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে । নারী অধিকারের নামে আমরা যেন আমাদের বৃদ্ধ পিতামাতাকে অবহেলা না করি বা বৃদ্ধ আশ্রমে যেন পাঠিয়ে না দেই ।
ঠিক! মোটামুটি সমর্থন!
মৌলিক লেখা। সেজন্য ধন্যবাদ জানাই।
সূর আসে না তবু বাজে চিরন্তন এ বাঁশী!
এটি অনুবাদ ।
শিক্ষনীয় পোষ্ট!! আমার জানা মতে সব মেয়ে তো আর একাকি সংসার চায়না। বরং তাদের চিন্তায় থাকে সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকার স্বপ্ন। কিন্তু সব সময় তা বাস্তব হয়ে উঠে না। আবার যে সব সংসারে মেয়েরা কর্তৃত্ব করে মানে বাবার বাড়ি এসে ভাবিদের উপর শাষন চালায়, দোষ ধরে খেতে, বসতে, শুইতে, আর মেয়ের কথা শুনে মায়েরাও তাই শুরু করে। শেষ পর্যন্ত কোন ভাবেই বনিবনা হয়না। তাদের বেলাতে কি করণীয়? জানাবেন।
লেখককে ধন্যবাদ
''সাদামেঘ''
সালাম
ঝগড়াঝাটি করে একসাথে থাকার চেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়াই ভাল ; তবে সেটা যেন হয় সুন্দরভাবে । সব মানুষের সাথেই তো ভাল ব্যবহার করা দরকার ।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে মেয়েদের ছোট থাকতেই এটা শেখানো হয় যে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বিশেষ করে শাশুড়ি খারাপ হয় । মেয়েরা তাই শাশুড়িকে শত্রু ভাবতে শিখে ।
বিয়ের পর ছেলে বউয়ের কথা শুনলেই সে বউয়ের ভেড়া হয়ে গেল ইত্যাদি ইত্যাদি বদনাম তাকে শুনতে হয় । মায়ের অধিকার আর স্ত্রীর দাবী পূরণের মধ্যে বড় কোন সংঘর্ষ হওয়ার তো কথা না যদি আমরা সবাই একটু ধৈর্য্যের পরিচয় দেই । সবাইকেই এখানে কিছু ছাড় দিতে হবে আর ছেলে / স্বামীকে একটু কৌশলী হতে হবে ।
ছেলের বউ নিজের হাতে শ্বশুর শাশুড়ির সেবা যত্ন করবে , এমনটি আজকাল কেউই আশা করেন না । তবে সবার সাথে মানিয়ে চলবে , এটুকু আশা করা হয় । তবে এক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির লোকদেরও খেয়াল রাখতে হবে যেন বউ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় ।